
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাংলাদেশের সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্স। সংস্থাটির প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়েছে, দীর্ঘ নির্বাসন শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী পদে এগিয়ে থাকা নেতা।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) প্রায় ১৭ বছর পর দেশে প্রত্যাবর্তন করেন তারেক রহমান। তার এই প্রত্যাবর্তনের খবর বিশ্বের একাধিক প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর প্রবাসে অবস্থানের পর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। দলটির নেতারা মনে করছেন, তার দেশে ফেরা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন গতি ও উদ্দীপনা সঞ্চার করবে। ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে অন্যতম শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অভ্যর্থনা কেন্দ্র পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক জড়ো হন। দলীয় পতাকা, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফুল হাতে তারা তারেক রহমানকে স্বাগত জানান। কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যেই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান।
৬০ বছর বয়সী তারেক রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র। তিনি ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছিলেন এবং ২০১৮ সাল থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
তার দেশে ফেরা এমন এক সময়ে ঘটল, যখন প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি জনসংখ্যার মুসলিম-প্রধান বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও কর্তৃপক্ষ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছে।
বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে তারেক রহমান জুতা খুলে খালি পায়ে দেশের মাটিতে পা রাখেন এবং একমুঠো মাটি হাতে তুলে নেন। হালকা ধূসর চেক ডিজাইনের ব্লেজার ও সাদা শার্ট পরিহিত তারেক রহমানের এই দৃশ্যকে তার দীর্ঘ প্রবাসজীবনের অবসানের প্রতীকী মুহূর্ত হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়।
অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, “প্রিয় বাংলাদেশ।” তিনি দেশের সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের নিরাপত্তা ও ঐক্যের প্রতিশ্রুতি দেন।
এর আগে অর্থপাচারসহ একাধিক মামলায় অনুপস্থিতিতে তারেক রহমান দণ্ডিত হয়েছিলেন। এসব মামলার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগও ছিল। তবে গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এসব রায় বাতিল হওয়ায় তার দেশে ফেরার পথ উন্মুক্ত হয়।
ব্যক্তিগত দিক থেকেও তার প্রত্যাবর্তন তাৎপর্যপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দেখতে তিনি হাসপাতালে যান।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার পালাবদলের রাজনীতির একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে।
শেখ হাসিনার পতনের পেছনে ভূমিকা রাখা তরুণ আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, তারেক রহমান দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্মাণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন। তার ভাষায়, নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় সহাবস্থান ও সুস্থ প্রতিযোগিতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের ডিসেম্বর মাসের এক জরিপে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি সর্বাধিক সংসদীয় আসন অর্জন করতে পারে। একই সঙ্গে ইসলামপন্থি দল জামায়াতে ইসলামীও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছে।
মন্তব্য করুন