
বিশ্বজুড়ে সাইবার নিরাপত্তার দিক থেকে ২০২৫ সালকে ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটপূর্ণ বছর হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকারি দপ্তর, বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো—সবখানেই নজিরবিহীন মাত্রায় সাইবার আক্রমণ ও তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার একাধিক বড় ধরনের সাইবার হামলার মুখে পড়ে। চীনভিত্তিক হ্যাকারদের আক্রমণের ফলে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পারমাণবিক নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সিস্টেম অচল হয়ে পড়ে। একই সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের সংবেদনশীল নথিপত্র হাতিয়ে নেয়।
বেসরকারি খাতেও পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। ক্লপ নামের একটি র্যানসমওয়্যার চক্র ওরাকলের অজানা একটি নিরাপত্তা দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে বহু প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ও গোপন তথ্য চুরি করে। ত্রুটিটি শনাক্ত হওয়ার আগেই বিপুল পরিমাণ তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।
যুক্তরাজ্যে ধারাবাহিক সাইবার হামলার কারণে খুচরা ব্যবসা খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার হামলার শিকার হয়ে কয়েক মাস উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। এর ফলে দেশটির অর্থনীতিতে বড় চাপ সৃষ্টি হয় এবং সরকারকে প্রায় ১৫০ কোটি পাউন্ড সহায়তা দিতে হয়।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও সাইবার ঝুঁকি চরম আকার ধারণ করে। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় প্রতি মাসেই বড় ধরনের সাইবার আক্রমণ ঘটে। দেশটির শীর্ষ টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান ও জনপ্রিয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম কুপাংয়ে হামলার ঘটনায় কোটি কোটি গ্রাহকের তথ্য ফাঁস হয়।
টেকক্রাঞ্চের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সরবরাহ চেইনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হ্যাকারদের তৎপরতাই ২০২৫ সালে সাইবার হামলার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে সাইবার হুমকি এখন কেবল প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকিতে পরিণত হয়েছে।
মন্তব্য করুন