
মানবদেহে এমন কিছু অঙ্গ রয়েছে, যেগুলো ছাড়া জীবনধারণ কল্পনাই করা যায় না। কিডনি তাদের মধ্যে অন্যতম। শরীরের দুই পাশে অবস্থান করা এই ছোট আকৃতির অঙ্গটি নীরবে প্রতিদিন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। রক্ত পরিশোধন, মূত্র তৈরি, ক্ষতিকর বর্জ্য অপসারণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা—সবকিছুতেই কিডনির ভূমিকা অপরিসীম।
সমস্যা হলো, কিডনি আক্রান্ত হলেও শুরুতে তেমন স্পষ্ট উপসর্গ দেখা যায় না। কারণ একটি কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্যটি অনেক দিন পর্যন্ত কাজ চালিয়ে নিতে পারে। ফলে রোগ ধরা পড়ে দেরিতে, যখন অবস্থা অনেকটাই জটিল হয়ে যায়।
চিকিৎসকদের মতে, কিডনি পুরোপুরি বিকল হওয়ার আগেই শরীর কিছু সতর্ক সংকেত দেয়। আশ্চর্যের বিষয়, এসব সংকেত অনেক সময় প্রথমে চোখেই ধরা পড়ে। চোখে দেখা দেওয়া কিছু পরিবর্তন আসলে হতে পারে কিডনি সমস্যার প্রাথমিক ইঙ্গিত। এগুলো অবহেলা করলে ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, কিডনি ঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে বিষাক্ত বর্জ্য জমতে শুরু করে এবং পানি ও খনিজ উপাদানের ভারসাম্য নষ্ট হয়। চোখ অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় শরীরের ভেতরের এসব পরিবর্তন অনেক সময় চোখের মাধ্যমেই আগে প্রকাশ পায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কিডনি সমস্যার আগে চোখে কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে—
হঠাৎ করে পরিষ্কার দেখতে না পারা, ফোকাসে সমস্যা বা একটির বদলে দুটি দেখা—এসব লক্ষণ চোখের সূক্ষ্ম রক্তনালির ক্ষতির ইঙ্গিত হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসজনিত সমস্যায় রেটিনার রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা পরোক্ষভাবে কিডনির রোগের সঙ্গেও যুক্ত। এর ফলে চোখে তরল জমা, ফোলা ভাব বা দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। যাদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদের দৃষ্টিতে হঠাৎ পরিবর্তন হলে কিডনির অবস্থাও পরীক্ষা করা জরুরি।
চোখে শুষ্ক ভাব, চুলকানি বা জ্বালা অনেক কারণে হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা থাকলে তা কিডনি রোগের লক্ষণও হতে পারে, বিশেষ করে গুরুতর পর্যায়ের রোগী বা ডায়ালাইসিস নেওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া বা বর্জ্য জমে যাওয়ার কারণে চোখে স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমে যেতে পারে। পরিবেশগত কারণ ছাড়াই চোখ নিয়মিত শুষ্ক ও লাল হলে কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।
সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ ফোলা থাকা সাধারণ বিষয়। কিন্তু সেই ফোলাভাব যদি সারাদিন না কমে, তাহলে তা চিন্তার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে চোখের পাতার আশপাশে ফোলা থাকলে সতর্ক হওয়া দরকার। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন বের হয়ে যায়, ফলে শরীরের নরম অংশে তরল জমে—এর একটি লক্ষণ হলো চোখের চারপাশে ফোলাভাব।
কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় চোখের অপটিক নার্ভ বা রেটিনার ক্ষতি হতে পারে। এর প্রভাব পড়ে রং শনাক্ত করার ক্ষমতার ওপর, বিশেষ করে নীল ও হলুদ রঙের ক্ষেত্রে। এই পরিবর্তন ধীরে ধীরে ঘটে বলে অনেক সময় চোখে পড়ে না। তবে রং ফিকে লাগা বা দৃষ্টি নিস্তেজ হয়ে এলে বয়সের দোষ না দিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
চোখ লাল হওয়ার পেছনে সাধারণত ক্লান্তি, অ্যালার্জি বা সংক্রমণ দায়ী থাকে। কিন্তু কখনো কখনো অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসজনিত সমস্যায় চোখের ক্ষুদ্র রক্তনালি ফেটে গিয়ে চোখ লাল দেখাতে পারে। কিছু অটোইমিউন রোগে কিডনি ও চোখ একসঙ্গে আক্রান্ত হয়। চোখ লাল হওয়ার সঙ্গে শরীর ব্যথা, ফোলা বা ত্বকে র্যাশ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।
চোখের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে থাকলে এবং তার সঙ্গে অতিরিক্ত ক্লান্তি, শরীর ফুলে যাওয়া বা প্রস্রাবে পরিবর্তন লক্ষ্য করলে শুধু চোখ নয়, কিডনির স্বাস্থ্যও পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি।
সূত্র : মায়ো ক্লিনিক
মন্তব্য করুন