
নির্বাচনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের দাবি, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে; তবে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যৌথ বাহিনীর অভিযান আবার শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়াতে সহায়ক হবে বলে মনে করছে ইসি।
গতকাল নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চার কমিশনার, ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দুপুরে তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে আলাদা বৈঠক হয় এবং পরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। সন্ধ্যায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিং করেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
তিনি জানান, যারা নির্বাচনকে ব্যাহত বা দুর্বল করার চেষ্টা করছে, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। জনমনে স্বস্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, যাতে কেউ সহিংসতার সুযোগ নিতে না পারে।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে আচরণবিধি মোটামুটি মানা হচ্ছে, তবে কিছু বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। শহীদ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড নির্বাচনি পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। মাঠপর্যায়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আচরণবিধি প্রতিপালনে আগের তুলনায় বেশি নজরদারি রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে কার্যক্রম চালাতে পারেন, সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চোরাগোপ্তা হামলা ও সহিংসতার ঝুঁকি প্রতিরোধে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রার্থী ও দলের আশপাশে থাকা সন্দেহজনক ব্যক্তিদের বিষয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়।
এই বৈঠকে প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তফসিল ঘোষণার পর থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং নির্বাচন পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে—এমন যেকোনো কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে দমন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি শিগগিরই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
যৌথ বাহিনীর অভিযানের লক্ষ্য হিসেবে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার এবং আইনের আওতায় আনার কথা জানানো হয়। পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক চেকপোস্ট, বিশেষ অভিযান ও দুর্গম এলাকায় বাড়তি নজরদারির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সম্ভাব্য দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি নির্দিষ্ট প্রোটোকল অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানানো হয়। কেউ নিরাপত্তা ঘাটতি অনুভব করলে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়।
নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত না হলেও সাম্প্রতিক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ভোটের পরিবেশে প্রভাব ফেলছে বলে ইসি মনে করছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হয়েছে।
২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিবন্ধন সম্পন্ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। পোস্টাল ভোটের ক্ষেত্রেও সময়মতো নিবন্ধনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে কমিশন জানায়, এসব ঘটনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব নির্বাচনি পরিবেশে পড়ে। মানবিক পুলিশিংয়ের নীতির অপব্যবহার যেন না হয়, সে বিষয়ে বাহিনীকে কঠোর বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে।
মন্তব্য করুন