সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার বড়ধুল ইউনিয়নের চড়মহেষপুর, দেবকলা এবং পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া, জাঙ্গালিয়া ও কলাবাগান চরে রাতের আঁধারে চলছে ভয়াবহ অবৈধ বালু উত্তোলন। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সেকশন কাটার ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদীর তীর চষে বেড়াচ্ছে স্থানীয় বালু সিন্ডিকেট। এর ফলে যমুনার তীব্র স্রোতে দাপট বেড়ে গিয়ে নদীভাঙন আশঙ্কাজনকভাবে মারাত্মক রূপ নিচ্ছে—হারিয়ে যাচ্ছে লোকজনের বসতবাড়ি, ফসলি জমি এবং সরকারি নদী রক্ষা বাঁধও পড়ছে চরম ঝুঁকিতে।
প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ করেও মিলছে না প্রতিকার—বরং হুমকি, ভয়ভীতি ও হামলার শিকার হতে হচ্ছে প্রতিবাদকারীদের।
এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে চৌহালি, জাঙ্গালিয়া, কলাবাগান ও বেলকুচি এলাকার প্রায় তিন শতাধিক নারী, পুরুষ, শিশু ও প্রবীণদের নিয়ে আয়োজন করা হয় মানববন্ধন। ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা জানালেন তাদের ক্ষোভ ও আতঙ্কের কথা।
রাতের আঁধারে ড্রেজার বসিয়ে তাণ্ডব
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ভুক্তভোগীরা জানান, বাপ্পি, জয়নাল, পাশান ও মিলনসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি রাতের অন্ধকারে ড্রেজার বসিয়ে জোরপূর্বক বালু উত্তোলন করছেন। তাদের অব্যাহত কার্যক্রমে নদীর তীররক্ষা বাঁধ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ইতোমধ্যে বহু ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্তরা একসময় নিষিদ্ধ সর্বহারা গ্রুপের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ২০২৩ সালে র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণের পর কিছুদিন চুপ থাকলেও বর্তমানে আবারও জড়িয়ে পড়েছেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও জিম্মি করে টাকা আদায়ের মতো অপরাধে। তাঁদের বালু উত্তোলনে বাধা দিতে গেলেই নেমে আসে নির্যাতন আর প্রাণনাশের হুমকি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়,যমুনা নদীপথে টাঙ্গাইলের জাঙ্গালিয়া এবং কলাবাগান চরের দুর্গম এলাকায় দুটি বড় ড্রেজার নোঙর করা। আশপাশে রয়েছে একটি অস্থায়ী ঘর, যা ব্যবহার করা হচ্ছে ‘অপারেশনের ঘাঁটি’ হিসেবে। সেখানে সন্দেহজনকভাবে বেশ কয়েকজনকে থাকতে দেখা গেলেও সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত সরে পড়ে তারা। স্থানীয়রা জানান, রাত যত গভীর হয়, ততই বাড়ে ড্রেজারের গর্জন আর নদীর বুকে বালু চুরির মহোৎসব।
বিষয়টি নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন—
“মানববন্ধনের বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান—“দিন বা রাত—যে সময়েই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হোক না কেন, আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এলাকাবাসীর একটাই দাবি—‘বাঁচতে চাই’
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া মানুষগুলোর মুখে একটাই কথা—নদী ভাঙনে সব হারানোর আগেই থামাতে হবে বালু সিন্ডিকেটকে। না হলে যমুনায় বিলীন হয়ে যাবে আমাদের চরের অস্তিত্ব, আমাদের জীবন ও জীবিকা।
তাদের দাবি—প্রশাসন যেন অবিলম্বে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ড্রেজার জব্দ করে চরের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।
মন্তব্য করুন