
এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের রাতে জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ভিড় ছিল লড়াই দেখতে আসা দর্শক দিয়ে পরিপূর্ণ। তবে বাংলাদেশ সেই প্রত্যাশাকে পরিণত করল ইতিহাসের এক মহামূল্যবান রাতে। দুই দশকেরও বেশি সময় পর ভারতের বিরুদ্ধে জয়ের সুযোগ হাতে আসতেই দল খেলল দৃঢ় শৃঙ্খলা, জেদ এবং নিখুঁত সমন্বয়ে। ম্যাচের গতিপথ বদলে দেয় ১১ মিনিটের সেই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, এবং এরপর থেকে বাংলাদেশ ধরে রাখল লিড, আত্মবিশ্বাস বজায় রেখে শেষ পর্যন্ত পেল কাঙ্ক্ষিত জয়। এটি সেই জয়ের পুনরাবৃত্তি যা সর্বশেষ ঘটেছিল ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে।
ম্যাচের শুরুতেই ভারত বলের দখলে আধিপত্য দেখালেও প্রথম গোলের স্বাদ নিল বাংলাদেশ। ১১ মিনিটে বাঁ দিক থেকে রাকিব হোসেনের নিখুঁত পাস ঠান্ডা মাথায় ফিনিশ করেন শেখ মোরছালিন। লাল-সবুজ জার্সিতে এটি তার সপ্তম গোল, এবং এটাই হয়ে দাঁড়ায় ইতিহাসের এক মাইলফলক।
এরপর ম্যাচে আসে উত্তেজনা। ৩৪ মিনিটে তপু বর্মণ ও ভারতের বিক্রমের সংঘর্ষ মাঠে উত্তাপ ছড়ায়। সামান্য হাতাহাতির পর দুজনকেই হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। এর আগে বাংলাদেশের বক্সে একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেখানে ভারতের ক্রস হামলার সময় হামজা চৌধুরী হেড দিয়ে বল ক্লিয়ার করে দলকে রক্ষা করেন। প্রথমার্ধের শেষের দিকে হামজার দূরপাল্লার শট সামান্য বাইরে চলে গেলে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়, তবুও বিরতিতে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ভারত আক্রমণে উঠে। কয়েকটি হাফ-চান্স তৈরি করে তারা গোলের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। কিন্তু রক্ষণভাগে সাদ উদ্দিন, তপু বর্মণ এবং বদলি হিসেবে নামা শাকিল আহাদের দৃঢ়তার কারণে সব আক্রমণ বিফল হয়। ৬০ মিনিটে ভারত বল দখলে বেশি থাকা সত্ত্বেও স্কোরলাইন ধরে রাখে বাংলাদেশ।
৮৩ মিনিটে ম্যাচের এক বিতর্কিত মুহূর্ত আসে। ভারতের একজন ডিফেন্ডারের হাতে বল লাগে, বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা পেনাল্টি দাবি করলেও রেফারি সেটি প্রত্যাখ্যান করেন। তবুও দল নিয়ন্ত্রণ হারায়নি এবং লিড ধরে রেখেছে।
শেষ মুহূর্তে কোচ বদলি হিসেবে নামান শাহরিয়ান ইমন ও তাজউদ্দিন। মাঝমাঠে গতি, রক্ষণে দৃঢ়তা, আক্রমণে ছন্দ—সব মিলিয়ে যোগ করা সময়েও ভারতকে গোল করতে দেয়নি বাংলাদেশ।
শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে স্টেডিয়ামে শুরু হয় উদযাপন। ২২ বছর পর ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পেল কাঙ্ক্ষিত জয়, আর সেই জয়ের নায়ক হয়ে থাকলেন মোরছালিন, হামজা এবং পুরো দল।