শাকিল রেজাঃ
বর্তমান সময়ে যেকোনো নির্বাচনে অনিয়ম-সংঘর্ষ নিয়মে পরিণত হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ কল্পনাই করা যায় না। তবে ব্যত্ক্রিমী পরিবেশ দেখা গেছে নাচোল পৌর নির্বাচনে। ২৮ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে বিরাজ করছে অনেকটা উৎসবের পরিবেশ। সবাই ব্যস্ত যার যার প্রচারণায়। নেই কোনো বাধা। ভোট-সম্প্রতির এক অনন্য নজির দেখা গেছে চঁাপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল পৌরসভাটিতে। আন্দোলনের সূতিকাগার ইলামিত্রের নাচোলে কখনো কোনো নির্বাচনে ভোট কারচুপির নজির তেমনভাবে দেখা যায় না। ভোটার ও প্রার্থীদের সবার বিশ্বাস যার যার পছন্দের প্রার্থীকে নির্দ্বিধায় তারা ভোট দিতে পারবেন। এ বিষয়ে ৭ নং ওয়ার্ডের ভোটার হাসান আলী বাবু বলেন, এখানে ভোট দিতে কখনই কেউ বাধা দেয় না। সব নির্বাচনেই সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করে। এ নির্বাচনেও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলে তার বিশ্বাস। ৮ নং ওয়ার্ডের ভোটার হাসানুজ্জামান ডালিম বলেন, পরিবেশ সুন্দর। আমি কখনো নির্বাচনে কারচুপি হতে দেখিনি। সবাই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেই ভোট নিতে হয়। এব্ং নির্বাচনপরবর্তী জয়ী প্রার্থীরাও অনেকটা দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করেন। পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র আব্দুর রশিদ খান ঝালু, (নৌকা),বিএনপির মাসউদা আফরোজ হক শুচি (ধানের শীষ) । এছাড়া স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন আমানুল্লাহ আল মাসুদ (রেল ইঞ্জিন)ও রেজাউল করিম বাবু(চামচ)।
সম্প্রতি নাচোল উপজেলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে। চার মেয়র প্রার্থী এক টেবিলে বসে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন, সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে যার যার মতো বক্তব্য রাখেন। একমঞ্চে বসে এ ধরনের বক্তব্য রাজনীতিতে বর্তমান অবস্থায় কল্পনাপ্রসূতই বলা যায়। মঞ্চে বসে সবাই মেতে উঠেন খোশগল্পে। প্রার্থীদের সমর্থকরাও ছুটে যাচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। আবার ফঁাক পেলেই চায়ের দোকানগুলোয় পরস্পরবিরোধী প্রার্থীদের সমর্থকরাও দলবেঁধে মেতে উঠছেন আড্ডায়। এক্ষেত্রে কারও কোনো অভিযোগ নেই। এমন পরিবেশ দেখা যায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের দিনও। সেদিন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থী পাশাপাশি দঁাড়িয়ে ফটোসেশনও করেন। সমর্থকরাও উল্লাস প্রকাশ করেন। সম্প্রতি ধানের শীষের নির্বাচনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় ডাকবাংলো ময়দানে। সে সময় অন্যপ্রার্থীদের মিছিল এলে তাদের চলে যাওয়ার জন্য সমাবেশে উপস্থিত কর্মী-সমর্থকরা দাড়িয়ে চলে যেতে সহায়তা করে। নির্বাচনী পরিবেশ বিষয়ে চঁাপাইনবাবগঞ্জ ডিএসবির এসআই আবুল কাশেম বলেন, আমি এ ধরনের পরিবেশ কখনো দেখিনি। দেশের অনেক জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছি। দুই প্রার্থীর মিছিল মুখোমুখি হলে নিশ্চিতভাবে সংঘর্ষ ঘটে। কিন্তু এখানে যার যার মতো করে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। অসাধারণ এক পরিবেশ। অভাবনীয়। পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দুরুল হোদা বলেন, সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে নির্বাচনী পরিবেশ। এ নির্বাচনে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছি না। ইভিএম নিয়ে একটা অস্বস্তি আছে। আশঙ্কাও কাজ করছে। প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড উপহার দিয়েছে। সবাই যার যার মতো প্রচার করছে। নির্বাচনী পরিবেশ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কে এ জোহা পলাশ বলেন, ‘বর্তমানে নির্বাচনী পরিবেশ অসাধারণ। আমি মনে করি এখানে ভোট কারচুপি হওয়ার কোনো ধরনের সম্ভাবনা নেই। সবাই ব্যস্ত প্রচারণায়। নিজ দলের প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, মেয়রদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি একমাত্র সরকারদলীয়ের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আমানুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, এখন পর্যন্ত সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। ভোটের পরে বলতে পারব কারচুপি হচ্ছে কিনা। স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবু বলেন, বর্তমানে সুন্দর পরিবেশ দেখছি। আশা করি ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত নাচোল পৌরসভা। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সব ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী বলেন, নাচোলে সব ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় উৎসবের পরিবেশে। এখানে সহিংসতা তো দূরের কথা কোনো ধরনের কারচুপিও কল্পনা করা যায় না। আমাদের বিশ্বাস সুষ্ঠু ভোটই হবে। নাচোল থানার অফিসার ইনচার্জ সেলিম রেজা বলেন, নির্বাচনের কোনো ধরনের সহিংসতা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলে তার বিশ্বাস। শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন করার লক্ষ্যে ২৫০ জন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া ১০ জন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। তার বিশ্বাস সুন্দর একটা নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হবে। ক্যাপশন : চার মেয়র প্রার্থীর একমঞ্চে বসে ইশতেহার ঘোষণা। ক্যাপশন : প্রতীক বরাদ্দের পর ফটোশেসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুর রশিদ ঝালু ও বিএনপি প্রার্থী মাসউদা আফরোজ হক শুচি
Leave a Reply