যশোরে আইনজীবীকে অপহরণের পেছনে ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দায়ী বলে জানিয়েছে পুলিশ। মূলত ক্রাইম পেট্রোল দেখেই এ অপরাধের পরিকল্পনা করে চক্রটি। উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে অপহরণকেই পেশা হিসেবে নিয়েছে এ চক্রের সদস্যরা।
আবু হেনা মোস্তাফা কামাল মিলন নামে হাইকোর্টের এক আইনজীবীকে অপহরণের তিনদিন পর যশোরের অভয়নগর থেকে উদ্ধার করেছে পিবিআই। ওই ঘটনায় তিন অপহরণকারীকে আটক করা হয়েছে। তবে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে অপহরণের মাস্টারমাইন্ড রাজ ও রিতুসহ কয়েকজন।
বুধবার দুপুরে পিবিআই যশোর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই’র পুলিশ সুপার রেশমা শারমীন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার যশোরের অভয়নগর উপজেলার একতারপুর থেকে আইনজীবী মিলনকে উদ্ধার করা হয়। তিনি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বারুইহাটি গ্রামের এমএ হাকিমের ছেলে। মিলনের সঙ্গে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামের এসএম হারুনুর রশিদের মেয়ে রাবেয়া সুলতানা রিতুর বিয়ে ঠিক হয়। এরই সূত্র ধরে রিতু তার সহযোগীদের মাধ্যমে ৬ ফ্রেব্রুয়ারি দুপুরে মিলনকে খুলনা পাইওনিয়র কলেজের সামনে দেখা করার জন্য ডেকে নিয়ে অপহরণ করে। এরপর তাকে অভয়গরের একতারপুরে রিতুর বান্ধবী সুরাইয়ার বাড়িতে বন্দি করা হয়।
পুলিশ সুপার রেশমা জানান, সেখানে আইনজীবী মিলনকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন এবং মুক্তিপণ হিসেবে তার পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে মিলনকে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেয় তারা। এমনকি ভয় দেখানোর জন্য মিলনের গায়ে কোয়েল পাখির রক্ত মেখে তা তার পরিবারকে দেয়া হয়।
তিনি আরো জানান, অপহণের ঘটনায় মিলনের ভগ্নিপতি শরিফুল ইসলাম ৮ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার তালা থানায় একটি জিডি করেন। পরে তারা জিডির কপি নিয়ে যশোর পিবিআই কার্যালয়ে আসে। পিবিআই তদন্ত শুরু করলে অপহরণকারীরা ডুমুরিয়ায় টাকা নিয়ে যেতে বলে। টাকা নিয়ে সেখানে গেলে তারা খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সামনে যেতে বলে। দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর অপহরণকারীরা অভয়নগরে যেতে বলে। ওই সময় শাহীন নামে এক অপহরণকারী টাকা নিতে গেলে তাকে আটক করা হয়। এরপর তার দেয়া তথ্যে অভয়নগর থানার সহযোগিতায় সুরাইয়ার বাড়ি থেকে অপহৃত আইনজীবীকে উদ্ধার ও সুরাইয়া-আব্দুস সালাম নামে আরো দুইজনকে আটক করা হয়।
পিবিআই’র পুলিশ সুপার রেশমা শারমীন বলেন, আমরা যখন সুরাইয়ার বাড়িতে যাই তখন তারা মিলনকে মারধর করছিল। তার চিৎকার যাতে বাইরে না যায় এজন্য উঁচু ভলিউমে গান বাজানো হচ্ছিল। অপহরণকারীরা উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের অর্থ সংগ্রহের জন্য অপহরণকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। তারা ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল থেকে এ অপরাধ সংগঠনে অনুপ্রাণিত হয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।
তিনি আরো বলেন, আইনজীবী অপহরণের মাস্টার মাইন্ড রাজ ও রিতুসহ কয়েকজন এখনো পলাতক। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রিতু খুলনার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তার অপরাধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে পরিবার কিছুই জানে না।
সম্পাদক
এড. গৌরাঙ্গ বসু (ট্রিপল এম.এ)
প্রকাশক
সবুজ বালা
© ২০২৫ আলোকিত জনপদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত