সম্রাট হোসেন, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
৫ম শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। আগামীকাল ১৬ জানুয়ারি শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ আকাঙ্ক্ষিত নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ মনোনীত ও আওয়ামীলীগ একাংশের সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মি সমর্থকদের মধ্যে কয়েকদফা ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছে। ১৩ জানুয়ারি বুধবার রাতে শৈলকুপা পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত আলীর ছোটোভাই লিয়াকত আলী ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ার পর মধ্যরাতে একই ওয়ার্ডের অপর কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর খান বাবুর মরদেহ কুমার নদ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। রহস্যজনক এ মৃত্যুতে ৮ নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর নির্বাচন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন ঘিরে দুটি অপমৃত্যুর ঘটনায় পৌর এলাকার পরিবেশ থমথমে। আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। ভোটারদের আশ্বস্ত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। ক্ষমতাসীন সরকারের আমলে বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনসহ স্থানীয় সকল নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসে চিড় ধরেছে অনুরূপভাবে। এবারের প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে কিছুটা ব্যতিক্রম লক্ষ করা গেছে । সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে আবার জনগণকে ভোটকেন্দ্রে টেনে আনা সম্ভব। স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হওয়ায় সরকারি দল এবং বিরোধীদলের মধ্যে টান টান উত্তেজনা থাকার কথা কিন্তু কার্যকরী বিরোধীদল না থাকায় নির্বাচনের মাঠে সে উত্তাপ নেই। যেটুকু আছে তা হলো সরকারি দল মনোনীত প্রার্থী এবং মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্রপ্রার্থীর মধ্যে। শৈলকুপা পৌরসভায় এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। আওয়ামীলীগ মনোনীত বর্তমান মেয়র কাজী আশরাফুল আজম (নৌকা), বিএনপি মনোনীত সাবেক মেয়র খলিলুর রহমান (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈয়বুর রহমান খান (জগ) এবং জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোঃ আবু জাফর (লাঙল)। এদের ৪ জনের বাড়িই বলতে গেলে একই গ্রামে। শৈলকুপা পৌরসভা গঠনের পর বিগত ৪ টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯৩ সালে বিএনপি মনোনীত ও সমর্থিত প্রার্থী খলিলুর রহমান আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী লুলু কাজী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আশরাফুল আজমকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১২ বছর পর ২০০৪ সালে ২য় পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী খলিলুর রহমান আবারও মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী কাজী আশরাফুল আজম এবং বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আমজাদ হোসেনকে পরাজিত করে। ২০১১ সালে ৩য় পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন ও সমর্থন পান তৈয়বুর রহমান খান। বিএনপির মনোনয়ন ও সমর্থন পান খলিলুর রহমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন কাজী আশরাফুল আজম। প্রতিদ্বন্দ্বীতা পূর্ণ এ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন কাজী আশরাফুল আজম। ২০১৬ সালে শৈলকুপা পৌরসভার ৪র্থ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দলীয় প্রতীকে। নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন লাভ করেন কাজী আশরাফুল আজম, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী খলিলুর রহমান এবং বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন তৈয়বুর রহমান খান। দলীয়চাপে শেষ মুহুর্তে তৈয়বুর রহমান খান প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলে অনেকটা বিনা বাধায়, নিরুত্তাপ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী খলিলুর রহমানকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন কাজী আশরাফুল আজম। বিগত দিনের ভোটের হিসাবে কাজী আশরাফুল আজম এবং খলিলুর রহমান দুজনেরই সামাজিক ও রাজনৈতিক ভিত্তি অত্যন্ত মজবুত। দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকায় বিএনপি প্রার্থী খলিলুর রহমানের অবস্থান ততটা শক্ত না হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈয়বুর রহমান খান এর সামাজিক অবস্থান বেশ পাকাপোক্ত। সুষ্ঠু ভোট হলে ভোটার যা-ই উপস্থিত হোক প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে ত্রিমুখী। বিগত দিনের তুলনায় এবারের নির্বাচন চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এবার ভোট হবে ইভিএম পদ্ধতিতে তারপরে রয়েছে শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী যার সমর্থক আওয়ামীলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। বিগত ৪ টি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এবারের নির্বাচনটাকে ২০০৪ ও ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সাথে মেলানো যায়। বিএনপি সরকার আমলে অনুষ্ঠিত ২০০৪ সালে ও আওয়ামীলীগ আমলের ২০১১ সালের শৈলকুপা পৌর নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়েছিল। আশা করছি আগামীকালের ৫ম শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচনটিও স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে। দাঙ্গা, ফ্যাসাদ, ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ভোটাররা বিনাবাধায় ভোট প্রদান করবেন। জনতার রায়ে নির্বাচিত হবেন সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি।
সম্পাদক
এড. গৌরাঙ্গ বসু (ট্রিপল এম.এ)
প্রকাশক
সবুজ বালা
© ২০২৫ আলোকিত জনপদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত