বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:০২ পূর্বাহ্ন

কৌশলে ভাড়াটিয়াকে ধর্ষণের অভিযোগ, পরে অপবাদ দিয়ে মারধর

মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ২৩ Time View

মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটকচর এলাকায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর এক গৃহবধূর বিরুদ্ধে এমন নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনায় ভেঙে পড়েছে পুরো এলাকা। অভিযোগ অনুযায়ী, মফিজ সরদারের ছেলে সোহাগ সরদার তাঁর ভাড়াটিয়া প্রবাসীর স্ত্রীকে কৌশলে গেস্ট রুমে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন এবং সেই ঘটনা সিসিটিভি ও মোবাইলে ধারণ করে ভিকটিমকে ব্ল্যাকমেইল শুরু করেন। পরে ওই ভিডিও দেখিয়ে বারবার ধর্ষণ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১ অক্টোবর সোহাগ সরদারের ছোট ভাই জসিম সরদার ভিকটিমকে পরকীয়া প্রেমের অপবাদ দিয়ে নির্যাতন শুরু করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। অভিযুক্তদের পূর্বপরিকল্পিত আচরণে সোহাগের পক্ষের কয়েকজন—সাজিদ হাওলাদার, মিম বেগম, লামিয়া, ঝর্ণা বেগম, কালাম সরদার ও আরও অনেকে—ভুক্তভোগীর কক্ষে ঢুকে দরজা-জানালা বন্ধ করে তাকে বেধড়ক মারধর করেন। নির্যাতনের একপর্যায়ে তারা গরম খুন্তি দিয়ে গৃহবধূর শরীরের সংবেদনশীল স্থানে আঘাত করার অভিযোগ রয়েছে। পরে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঘরে আটকে রাখা হয়। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে পরিবারের লোকেরা তাকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার তাকে ঢামেক বার্ন ইউনিটে পাঠান। বহুদিন চিকিৎসার পর ১৩ অক্টোবর তিনি বাড়ি ফিরে আসেন।

স্থানীয়রা ঘটনার খবর জানার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকালে দোষীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকাবাসী। পুলিশ জানায়, দ্রুতই দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে। তবে ঘটনার পর অভিযুক্তদের পরিবার ওই এলাকায় পালিয়ে আছে বলেও জানানো হয়েছে; পুলিশ এখনও তাদের ধরতে চেষ্টা চালিয়ে চলছে।

নির্যাতিতা ও পরিবারের কান্নাভরা বর্ণনায় জানা যায়, তারা দীর্ঘ সময় লোক লজ্জার ভয়ে এ বিষয়ে কাউকে জানিয়েছিলেন না। পরে মামলা দেওয়ার সাহস পাওয়ায় বিষয়টি সম্প্রতি সামনে আসে। ভিকটিম অভিযোগ করেন—তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে এবং পরিবারের কাউকে মামলাটি করার পরই অভিযুক্ত পক্ষ থেকে তাদের ওপর ভয় দেখানো হচ্ছে। তিনি দোষীদের কঠোর বিচার দাবি করেন।

এক অনাম প্রকাশে ব্যক্তি জানান, সোহাগ সরদার স্থানীয় আওয়ামীলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তার প্রভাবকে ভিন্ন উদ্দেশ্যে কাজে লাগানোর অভিযোগও উঠেছে; স্থানীয়ভাবে তিনি মাদক ও জুয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার কথাও শোনা যায়। তাছাড়া অভিযুক্তের বাড়িতে এখন কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে এলাকাবাসী জানায়।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনায় ৩ অক্টোবর ভিকটিমের মা বাদী হয়ে মাদারীপুর সদর থানায় সাত জনের নামে মামলা করেছেন এবং দ্রুতই দোষীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, এলাকা থেকে পুরো আত্মীয়পরিজনকে পলাতক থাকার পরও তাদের খোঁজে অভিযান চলমান।

স্থানীয়রা এই ঘটনার দৃশান্তমুলক শাস্তি দাবী করে বলছেন—যতই দোষী প্রভাবশালী হোক, তাকে ছাড় দেয়া যাবে না। ঘটনার বাদী ও ভুক্তভোগী পরিবার নিরাপত্তা ও ন্যায়িক প্রতিকার চেয়েছেন।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

More News Of This Category
Adsense