আধুনিক কর্মজীবনের ব্যস্ততা, দীর্ঘসময় একসাথে কাজ এবং চাপ ভাগাভাগি করার কারণে সহকর্মীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হওয়াটা খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। অনেক সময় এই ঘনিষ্ঠতা প্রেমের সম্পর্কেও রূপ নেয়। যদিও অফিসে প্রেম নতুন কিছু নয়, তবে এর সঙ্গে জড়ানোর আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।
নীতিমালার বিষয়ে সচেতনতা জরুরি
প্রথমেই জানতে হবে—আপনার প্রতিষ্ঠানটি অফিসে রোমান্টিক সম্পর্কের বিষয়ে কী নীতি অনুসরণ করে। অনেক প্রতিষ্ঠানে সহকর্মীদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক নিরুৎসাহিত করা হয়, আবার কোথাও সম্পর্কের বিষয়টি মানবসম্পদ বিভাগকে জানানো বাধ্যতামূলক। এসব নিয়ম লঙ্ঘন করলে ভবিষ্যতে চাকরিজীবনে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
সম্মতির গুরুত্ব উপেক্ষা নয়
অফিসে প্রেমের ক্ষেত্রে ‘সম্মতি’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যদি সম্পর্কটি একতরফা হয় বা এক পক্ষ আগ্রহী না হয়, তবে তা যৌন হয়রানির অভিযোগের দিকে গড়াতে পারে, যার প্রভাব পড়বে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে।
পেশাদার পরিবেশ বজায় রাখুন
সম্পর্ক যেন কোনোভাবেই অফিসের পরিবেশ বা কর্মসম্পাদনে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ, অন্য সহকর্মীদের অস্বস্তি বা টিমের মধ্যে বিভাজন তৈরি হলে তা শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয়, পুরো টিমকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ভবিষ্যতের ঝুঁকি চিন্তা করা প্রয়োজন
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, অফিসে শুরু হওয়া সম্পর্ক ভেঙে গেলে সেটা কর্মক্ষেত্রে চাপ ও অস্বস্তির কারণ হতে পারে। একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তাই সম্পর্ক শুরুর আগে সম্ভাব্য ভবিষ্যতের জটিলতা নিয়েও চিন্তা করা জরুরি।
পেশাদারিত্ব আর ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সীমানা টানুন
নিজের দায়িত্ব পালনে কোনোভাবেই ব্যক্তিগত সম্পর্ক যেন প্রভাব না ফেলে—এটি নিশ্চিত করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পেশাগত অবস্থান এবং সম্মান বজায় রাখার জন্য অফিস ও ব্যক্তিগত জীবনের মাঝে একটি পরিষ্কার সীমারেখা থাকা দরকার।
যদি সম্পর্ক গড়ে ওঠে, কীভাবে সামলাবেন?
অফিসে সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ালে কিছু বাস্তব দিক মাথায় রাখা জরুরি। মার্কিন ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ ভিকি সালেমি পরামর্শ দেন, যদি বুঝতে পারেন সম্পর্কের বিষয়টি একপর্যায়ে অফিসের মানবসম্পদ বিভাগকে জানাতে হতে পারে কিংবা একজনকে অন্য বিভাগে বা অফিসে বদলি হতে হতে পারে—তাহলে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।
সম্পর্কে স্বচ্ছতা আনুন, তবে সংযত থাকুন
প্রথমত, সম্পর্কটি পুরো অফিসে না ছড়িয়ে সীমিত পরিসরে জানানো ভালো। তবে খোলাখুলি ব্যক্তিগত আলাপ বা প্রকাশ্য ভালোবাসা প্রদর্শন থেকে বিরত থাকুন। সম্পর্ক লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করলে তা নিয়ে কানাঘুষা বা গুজব ছড়াতে পারে, বিশেষ করে যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। তাই গুজবের আগে নিজেদের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
দায়িত্বে মনোযোগ দিন
সবশেষে, সম্পর্ক যত গভীরই হোক না কেন, তা যেন কাজের উপর প্রভাব না ফেলে। দায়িত্ব পালন, পেশাদার আচরণ এবং কাজের মান বজায় রাখা কেবল ক্যারিয়ার নয়, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্যও সমান জরুরি।
অফিসে প্রেম করতেই হবে এমন নয়। তবে যদি ভালোবাসা জন্ম নেয়, তাহলে তা যেন পেশাগত পরিবেশ বা ব্যক্তিগত সম্মান নষ্ট না করে, সেদিকে সদা সচেতন থাকাই হবে সবচেয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত।