র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনী, বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার, ডাকাত, ছিনতাইকারী, অপহরণ, প্রতারক ও হত্যাকান্ডের অপরাধে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যার সাথে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
গত ২৬/০৬/২০২৫ ইং তারিখ দিবাগত রাতে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানাধীন বাহেরচর গ্রামের ভিকটিম তার পিতার বাড়ীতে অবস্থান করাকালীন ২৩.৩০ ঘটিকায় একই গ্রামের শহিদের বড় ছেলে ফজর আলী কৌশলে ভিকটিমের ঘরে প্রবেশ করে। একই তারিখ ২৩.৫০ ঘটিকায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমের বাড়ীর আশেপাশে অবস্থান করা একই গ্রামের অনিক, আরিফ, সুমন, রমজান সহ অজ্ঞানমানা ৮/১০ জন ব্যক্তি দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে ভিকটিমকে শারীরিক নির্যাতন, শ্লীলতাহানী সহ অশ্লীল ভিডিও চিত্র ধারন করে এবং পরবর্তীতে উক্ত ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-২০, তারিখ-২৯/০৬/২০২৫ ইং, ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর ১০ তৎসহ ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রন আইনের ৮(১)/৮(২)/৮(৩)। উক্ত ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। আলোচিত এই ঘটনার সাথে জড়িত মূল আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী চলমান রাখে।
গোয়েন্দা নজরদারী, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও প্রাপ্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ০৩/০৭/২০২৫ ইং তারিখে র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর আভিযানিক দল কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানাধীন কাবিলা বাজার এলাকা হতে উক্ত ঘটনায় মব সৃষ্টির অন্যতম পরিকল্পনাকারী মোঃ শাহ পরান (২৮), পিতা-মোঃ শহিদ মিয়া, মাতা-আলেখা বেগম, সাং-বাহেরচর, থানা-মুরাদনগর, জেলা-কুমিল্লা’কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকালে আসামীর নিকট হতে ০১ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ঘটনার পনেরো দিন পূর্বে ভিকটিম তার স্বামীর বাড়ী হতে পিতার বাড়ীতে বেড়াতে আসে। আরও জানা যায় যে, বাহেরচর গ্রামের শহিদের বড় ছেলে ফজর আলী ও ছোট ছেলে শাহ পরান দীর্ঘদিন যাবৎ ভিকটিমকে উত্যাক্ত করে আসছিল। ঘটনার দুই মাস পূর্বে তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধের জের ধরে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরই প্রেক্ষিতে গ্রাম্য শালিসে জন সম্মুখে বড় ভাই ফজর আলী তার ছোট ভাই শাহ পরানকে চর থাপ্পর মারে। তৎপরবর্তীতে শাহ পরান তার বড় ভাইয়ের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সুযোগের সন্ধানে থাকে। শালিসের কিছু দিন পর ভিকটিমের মা ফজর আলী নিকট থেকে ৫০,০০০/- টাকা সুদের বিনিময়ে লোন নেয়। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পরে ভিকটিমের পিতা-মাতা নিকটবর্তী জনৈক ব্যক্তির বাড়ীতে সনাতন ধর্মালম্বীদের মেলা দেখতে যায়। এই সুযোগে ফজর আলী সুদের টাকা আদায়ের অযুহাতে ২৩.৩০ ঘটিকায় কৌশলে ভিকটিমের শয়নকক্ষে প্রবেশ করে। একই তারিখ ২৩.৫০ ঘটিকায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমের বাড়ীর আশেপাশে অবস্থান করা মামলার মূল হোতা শাহ পরান ও ফজর আলীর পূর্ব শত্রæ একই গ্রামের আবুল কালাম সহ অনিক, আরিফ, সুমন, রমজান এবং অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জন ব্যক্তি দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করেই ভিকটিমকে শারীরিক নির্যাতন, শ্লীলতাহানী ও অশ্লীল ভিডিও চিত্র ধারন করে এবং পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
ঘটনার পর মূল হোতা শাহ পরান সহ আবুল কালাম ও অন্যান্য আসামীরা আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামী শাহ পরানকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী স্বীকার করে যে, পূর্ব শত্রæতার কারণে তার ভাই ফজর আলীর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে তার নির্দেশনা মোতাবেক অন্যান্য আসামীদের সহায়তায় ভিকটিম ও ফজর আলীকে নির্যাতন, শ্লীলতাহানী ও অশ্লীল ভিডিও চিত্র ধারন পূর্বক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটায়।গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
Leave a Reply