শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০২:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

তুরস্কের প্রভাব এড়াতে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকছে সিরিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০২৫
  • ২৩ Time View
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। ছবি : সংগৃহীত

তুরস্কের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগ নিয়েছে সিরিয়া। এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে দামেস্ক। এই কৌশলগত অবস্থানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা, যিনি মূলত আঙ্কারার প্রভাব হ্রাস করে দেশের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান।

ইসরায়েলি দৈনিক মাআরিভ-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের মোশে দায়ান সেন্টারের বিশ্লেষক ড. হাই এইতান কোহেন ইয়ানারোচাক বলেন, ‘এই উদ্যোগ আদর্শিক নয়, বরং কৌশলগত। শারা তুরস্কের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে কিছুটা স্বাধীনতা অর্জন করতে চাইছেন।’

তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘শারা কোনোভাবেই জায়নবাদী নন। তবে তিনি উপলব্ধি করছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে তুরস্কের প্রভাব কমানো সম্ভব।’

তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন নয়, ভারসাম্যের খোঁজে সিরিয়া

ড. ইয়ানারোচাক আরও জানান, শারা তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করতে চান না। বরং তিনি একটি কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইছেন, যাতে সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতিতে আঙ্কারার প্রভাব কমে আসে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দামেস্কের এই অবস্থান আঙ্কারায় উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। একসময় তুরস্কের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচিত সিরিয়া যদি আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত হয়, তাহলে তা আঞ্চলিক রাজনীতিতে তুরস্কের জন্য একটি বড় ধাক্কা হয়ে উঠবে।

সিরিয়ায় তুরস্কের দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতি

ইয়ানারোচাক স্মরণ করিয়ে দেন, আসাদ সরকারের দুর্বলতার পর সিরিয়ায় প্রথম কোনো রাষ্ট্রীয় সফর করে তুর্কি গোয়েন্দা সংস্থা। আজও উত্তর সিরিয়ার বহু এলাকা কার্যত তুরস্কের নিয়ন্ত্রণে, যেখানে তারা অবকাঠামো, পরিবহন ও বিমানবন্দর উন্নয়নে সক্রিয়।

তিনি আরও জানান, সিরিয়ার বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য তুরস্কে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন, কেউ কেউ তুর্কি নাগরিক, এবং প্রায় সবাই তুরস্কের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট।

ইরানের দুর্বলতা থেকে লাভবান তুরস্ক

মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ভূরাজনীতিতে তুরস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করেছে। ইয়ানারোচাক বলেন, ‘ইরান ও তুরস্ক ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বী। সিরিয়ায় আসাদ সরকার দুর্বল হওয়ার ফলে ইরানের প্রভাব কমেছে, আর সেখান থেকে তুরস্ক পরোক্ষভাবে লাভবান হয়েছে।’

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান আঞ্চলিক শক্তি হয়ে উঠেছে ইসরায়েল ও তুরস্ক। এ অবস্থায় সিরিয়া যেন এই দুই পক্ষের সম্ভাব্য সংঘাতের মঞ্চে পরিণত হচ্ছে।

সিরিয়ার যোগদানে বাধা দিতে তুরস্কের তৎপরতা

তুরস্ক চায় না সিরিয়া আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করুক। ইয়ানারোচাক বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, তুরস্ক সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে যাতে সিরিয়া এই চুক্তিতে না যোগ দেয়।’

এর পেছনে কৌশলগত কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তুরস্ক চায় সিরিয়া ও কাতার তাদের পাশে থাকুক এবং ইসরায়েলকে আঞ্চলিকভাবে বিচ্ছিন্ন রাখা সম্ভব হোক। এরদোয়ান যখন ইসরায়েলের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান, তখন সিরিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা তুরস্কের এই কৌশলকেই বাধাগ্রস্ত করবে।’

সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Adsense