মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বিশ্বজুড়ে ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েছেন, যাদের অন্তত এক-তৃতীয়াংশই শিশু। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট-এ মঙ্গলবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনটি ২০০১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বের ১৩৩টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির (USAID) সহায়তায় অন্তত ৯১ লাখ মানুষের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হয়েছিল।
কিন্তু সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইউএসএআইডির সহায়তা প্রায় ৮৩ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দিলে বিশ্বজুড়ে একটি গুরুতর মানবিক সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়। গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এই সহায়তা বন্ধ থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
গবেষণার প্রধান লেখক দাভিদ রাসেলা, যিনি বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের একজন গবেষক, বলেন, “এই সহায়তা বন্ধের প্রভাব কেবল স্বাস্থ্য খাতেই নয়— এটি মহামারির বিস্তার, সামাজিক অস্থিরতা এমনকি সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে।”
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ইউএসএআইডির কার্যক্রম চালু থাকা এলাকাগুলোতে এইচআইভি/এইডসজনিত মৃত্যুর হার ৬৫ শতাংশ কম ছিল। পাশাপাশি, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য সংক্রামক রোগেও মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল।
গবেষণার সহ-লেখক জেমস মাসিনকো বলেন, “প্রতি বছর একজন মার্কিন নাগরিক গড়ে মাত্র ৬৪ ডলার অনুদান দিয়ে থাকেন ইউএসএআইডিতে। এত অল্প অনুদানে এত বড় প্রভাব সম্ভব— এটা জানলে আরও অনেকে হয়তো সহায়তা অব্যাহত রাখতে আগ্রহী হতেন।”
বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ, রোগবিস্তার কিংবা যুদ্ধের মতো মানবিক সংকটে ইউএসএআইডি দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। হঠাৎ করে এই সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলো।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে তা শুধু স্বাস্থ্য খাত নয়— বরং সামগ্রিক উন্নয়ন ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপরও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সূত্র: রয়টার্স
Leave a Reply