বিএনপি জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে আগ্রহী বলে জানিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এখন একটি সুন্দর ও উন্নত বাংলাদেশের সূচনা ঘটানোর সুযোগ এসেছে। জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জবাবদিহিমূলক, ন্যায়সঙ্গত, গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য এটাই সঠিক সময়।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী (বিসিএফসিসি) সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দলের কর্মসূচি উদ্বোধনের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসানের পর আমার প্রথম বক্তব্যে আমি বিশেষ করে গণঅভ্যুত্থানে যারা তাদের সন্তান হারিয়েছেন, তাদের মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছিলাম। অনেকেই প্রিয়তম স্বামী ও ভাইকে হারিয়েছেন। সেই ত্যাগের বিনিময়ে ৫ আগস্ট বাংলাদেশ একটি নতুন বিজয় লাভ করেছে। একজন শহীদ শুধু পরিবারের সদস্য নয়, তারা দেশের গৌরব এবং মুক্তি সংগ্রামী মানুষের অহংকার। তাদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
তিনি আরও বলেন, যেভাবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আমরা ভুলিনি, তেমনি ২০২৪ সালের যোদ্ধাদের ত্যাগও জাতি কখনো ভুলবে না। বিএনপি ক্ষমতায় এলে শহীদদের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা নামকরণের উদ্যোগ নেবে। যারা দেশ ও জনগণের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন তাদের জন্য বিশেষ ভাবনা রয়েছে আমাদের। আমরা চাই দেশের ভিত্তি এমন হোক যেখানে সর্বাধিক ক্ষমতা থাকবে জনগণের হাতে। এতে রাজনৈতিক দুর্নীতি ও অসভ্যতা কমে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে বিএনপি ৩৬ দিনের কর্মসূচি শুরু করেছে। এ উপলক্ষে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠান করা হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ৬৩টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা, বুদ্ধিজীবী, সিনিয়র সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। শহীদ পরিবারকে ক্রেস্ট ও সম্মাননা দেওয়া হয় এবং অভ্যুত্থানের একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
তারেক রহমান বলেন, দেড় দশকের আন্দোলনে গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন বহু মানুষ। অপহরণের তালিকাও দীর্ঘ। শুধু জুলাই আন্দোলনে বিএনপির ৪২২ জনসহ প্রায় দেড় হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন। ৩০ হাজারের বেশি আহত, এক হাজারের বেশি পঙ্গু হয়েছেন। শিশু-বাচ্চারা পর্যন্ত শহীদ হয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ে শহীদ আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা জীবন দিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, এমন ত্যাগের পর মানুষ কি এভাবে জীবন দিতে থাকবে?
তিনি আরো বলেন, ৫৪ বছর সময় কম নয়। এ সময়ে মানুষের ত্যাগ আমরা ভুলতে চাই না। বরং যারা দেশের কল্যাণে রাজনীতি করে তাদের অঙ্গীকার হলো নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সুশৃঙ্খল রাজনীতি এবং ওয়াদা পূরণের রাজনীতি। ভবিষ্যতে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার কথাও তিনি তুলে ধরেন। রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ক্ষমতা পেলে আমরা জাতীয় সরকার গঠন করে কাজ করব। জাতীয় স্বার্থে সবাই এক। তবে জাতীয় ঐক্যের জন্য সব দলের মিলিত হওয়া জরুরি নয়। অপশক্তির উত্থান রোধে জাতীয় ঐক্য অটুট থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ‘জুলাই-আগস্ট’ গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী। স্বাগত বক্তব্য দেন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান। এছাড়াও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, বিশিষ্টজন এবং সারাদেশ থেকে আহত ব্যক্তি ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply