বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদের স্মৃতিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার জন্য তার পরিবার জোরালো আবেদন জানিয়েছে। তারা ১৬ জুলাইকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ হিসেবে পুনরায় ঘোষণা করার দাবি তুলেছেন।
মঙ্গলবার (০১ জুলাই) ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জাফরপাড়ায় শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন। পরে তারা আবু সাঈদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং একান্তে আলোচনা করেন। এসময় শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন ও মা মনোয়ারা বেগম দ্রুত হত্যার বিচার দাবি করেন এবং ১৬ জুলাইকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানান।
শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন এনসিপি নেতাদের কাছে এই দিবস পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়ে বলেন, “আমাদের একটি দাবি রয়েছে। আগের সরকার ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ ঘোষণা করলেও তা বাতিল করে। আমরা চাই ১৬ জুলাই ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ হিসেবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হোক। আমরা কোনো শহীদকে ছোট করে দেখছি না, কিন্তু আবু সাঈদের চেতনায় লাখো মানুষ আন্দোলনে নেমেছিল। তাই তাকে যথাযথভাবে স্মরণ করার জন্য আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে এই দাবি।”
আবু হোসেন কালবেলাকে বলেন, “আমাদের দাবি, ১৬ জুলাইই ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ হোক। জুলাই মাসের যে কোনো দিন ‘জুলাই শহীদ দিবস’ পালন করা যায়, তবে ১৬ জুলাই যে দিনটি তার আত্মত্যাগের, সেটি বিশেষভাবে সম্মানিত হওয়া উচিত। তার মৃত্যু থেকে এত বড় আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে অবমূল্যায়ন আমরা মেনে নিতে পারছি না।”
তিনি আরও আক্ষেপ করে বলেন, “অনেক মানুষের নামে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবস পালন করা হয়, কিন্তু শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুদিনকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করতে সমস্যা কেন, তা বুঝে উঠতে পারছি না। যদি প্রথম থেকেই ঘোষণা দেওয়া হতো ১৬ জুলাই ‘জুলাই শহীদ দিবস’, তাহলে হয়তো আমাদের আপত্তি কম থাকত। কিন্তু একজন আইকনিক শহীদের প্রতি এমন অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাই।”
প্রসঙ্গত, গত বছর রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১৬ জুলাইকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তিন দিন পর তা পরিবর্তন করে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ ঘোষণা করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই পুলিশি গুলিতে নিহত আবু সাঈদের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনে নতুন উৎসাহ যোগ হয়। ক্যাম্পাস ও সড়কসমূহ শোক ও ক্ষোভে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। এই ঘটনা সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয় এবং স্বৈরাচার শাসক শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য করে।
Leave a Reply