নির্বাচন কমিশন (ইসি) আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসে উদ্যোগ নিচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় নির্বাচন ভবনে এ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৭৫টি আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। একইসঙ্গে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণবিধি নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
পুনর্বিন্যাসের পটভূমি ও আবেদনের সংখ্যা
ইসি সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদের মোট ৩০০টি আসনের মধ্যে ৭৫টি আসন পুনর্বিন্যাসের দাবিতে এখন পর্যন্ত ৬০৭টি আবেদন জমা পড়েছে। আবেদনগুলোতে প্রশাসনিক অখণ্ডতা, ভৌগোলিক পরিস্থিতি, জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা এবং ঐতিহাসিক বাস্তবতা বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে বাকি ২২৫টি আসনে কোনো আবেদন না থাকায় সেগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না।
২০০৮ সালে সংসদীয় আসনের বড় ধরনের সীমানা পরিবর্তন হলেও পরবর্তী তিনটি জাতীয় নির্বাচনে তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল এ নিয়ে বরাবরই আপত্তি জানিয়ে এসেছে। তাদের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে কারচুপির অংশ হিসেবেই অতীতে সীমানা পরিবর্তন হয়েছিল।
জুলাইয়ের পরিবর্তনের পরপরই তৎপরতা
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেক ক্ষুব্ধ ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতা সক্রিয় হয়ে আসন পুনর্বিন্যাস চেয়ে আবেদন জমা দিতে শুরু করেন। দীর্ঘ সময় আটকে থাকা এ বিষয়টি সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের অধ্যাদেশের মাধ্যমে গতি পায় এবং নির্বাচন কমিশন নতুন করে উদ্যোগ নেয়।
বিএনপির নেতৃত্বে অধিকাংশ আবেদন
ইসির তথ্যমতে, আবেদনকারীদের একটি বড় অংশ বিএনপি সংশ্লিষ্ট। তাদের মধ্যে রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। প্রায় ৯০ শতাংশ আবেদন ২০০১ সালের সীমানায় ফিরে যাওয়ার দাবি জানায়।
বিশেষ কিছু আসনে আবেদন ও পরিবর্তনের সম্ভাবনা
পিরোজপুর-২: সর্বাধিক ১০৩টি আবেদন জমা পড়েছে। এ আসনে পরিবর্তন হলে পিরোজপুর-১-এরও প্রভাব পড়বে।
কুমিল্লা-১০: অন্তত ৯২টি আবেদন জমা পড়েছে।
ঢাকা-৭: মোট ৩৬টি আবেদন, বেশিরভাগই কামরাঙ্গীরচর এলাকা ঢাকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছে।
ঢাকা-১, ২ ও ৩: দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলাকে আলাদা আসনে ফেরানোর দাবি এসেছে ২৩টি আবেদনে।
মানিকগঞ্জ ও চাঁদপুর: নতুন আসন চেয়ে যথাক্রমে ৩৮ ও ৯টি আবেদন জমা পড়েছে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য আবেদন
বরিশাল, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, যশোর, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রাম থেকেও আসন পুনর্বিন্যাসের আবেদন এসেছে।
কমিশনের বক্তব্য ও নির্দেশনা
সীমানা পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, সকল আবেদনের যৌক্তিক দিকগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যুক্তিযুক্ত আবেদন বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ২০০১ সালের আসন বিন্যাসে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি ২০০১, ২০০৮, ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের আসন সীমানা পরিবর্তনের তুলনামূলক বিবরণ তৈরি এবং ভোটার সংখ্যার ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন।
উপসংহার
৩০০টি আসনই বহাল থাকছে, তবে বিদ্যমান আইন অনুসরণ করে বহু আসনের সীমানায় পরিবর্তন আসতে পারে। শহরের আসন কমিয়ে গ্রামাঞ্চলে বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। বিশ্লেষকদের মতে, এই সীমানা পুনর্বিন্যাস আগামী নির্বাচনের চিত্রে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
সম্পাদক
এড. গৌরাঙ্গ বসু (ট্রিপল এম.এ)
প্রকাশক
সবুজ বালা
© ২০২৫ আলোকিত জনপদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত