শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১১:১০ পূর্বাহ্ন

পিপিআরের শর্ত ভঙ্গ করে বিল পরিশোধ: নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরে আওয়ামী লীগের দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে!

বিশেষ প্রতিবেদক
  • Update Time : সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫
  • ৭৮ Time View

নৌ-পরিবহণ অধিদপ্তরে গোপালগঞ্জের একাধিক কর্মকর্তার অবিশ্বাস্য দুর্নীতি ও দৌরাত্ম চলছে। এসব কর্মকর্তারা গত ১৭ বছরে গোটা আওয়ামী লীগ আমলে গোপালগঞ্জের কোটায় লোভনীয় পদে থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। বর্তমানে তিনি সিএনএস পদে কর্মরত। ইচ্ছামাফিকই চলছে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের যাবতীয় কার্যাবলী। তার মধ্যে মাষ্টারশীপ পরীক্ষা বাণিজ্য ও সিডিসি সনদ বাণিজ্য অন্যতম। তার এই সব দুর্নীতির বিষয়ে গত ৫ বছর ধরে দুদক তদন্ত করছে। কিন্তু বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় তিনি গোপালগঞ্জের লোক পরিচয়ে নিরাপদ রয়ে গেছেন। দুর্নীতির কারণে তাকে সিএনএস পদ থেকে অপসারণের দাবী তুলেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা। বর্তমান সরকারে ক্ষমতায় আসার প্রায় দশ মাস পেরিয়ে গেলেও নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর স্বৈরাচারের দোসর মুক্ত হয়নি। কেবলমাত্র প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে অধিদপ্তরটিকে শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত করা যাচ্ছে না।একই সাথে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বতীকালীন সরকারের বয়স ৮ মাস অতিবাহিত হলেও সংস্কারের কোন ছোঁয়া লাগেনি এ অধিদপ্তরে। গোপালগঞ্জ-ময়মনসিংহ চক্রটি এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন অধিদপ্তরের নিয়োগ,বদলী,পদোন্নতি,টেন্ডার,নৌযান সার্ভে, রেজিষ্ট্রেশন,মালিকানা পরিবর্তন ও প্রকল্পের কেনাকাটার কাজ। এসব বিষয় নিয়ে বারবার নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের রয়েছে উদাসীনতা। ফলে গোপালগঞ্জ-ময়মনসিংহ অসাধু চক্রটি ইচ্ছে খুশিমত ফাইল ওয়ার্ক করছেন আর মন্ত্রনালয়কে তাকে ভুল বুঝিয়ে একটার পর একটা ফাইল স্বাক্ষর করিয়ে নিচ্ছেন। অধিদপ্তরেরই আরেকজন কর্মকর্তা হলেন,ময়মনসিংহের ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শীপ সার্ভেয়ার আবুল বাশার যিনি ক্যাপ্টেন গিয়াসের ডান হাত হিসেবে পরিচিত। তিনি আপদমস্তক একজন নেশাখোর কর্মকর্তা হিসাবে অধিদপ্তরে পরিচিত। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অসংখ্য দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রজেক্ট সংক্রান্ত কোনও কোর্স, কোন প্রকার অভিজ্ঞতা ও এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হবার জন্য জি এম ডি এস এস সনদ না থাকা সত্তেও তাকে জিএমডিএসএস প্রকল্পের পিডি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তাকে ক্যাপ্টেন গিয়াস ছাড়াও সহযোগিতা করেছেন দুদকের মামলায় দুর্নীতির দায়ে সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত প্রাক্তন প্রকল্প পরিচালক ও সাবেক নৌ মন্ত্রী শাজাহান খানের পালক পুত্রের পরিচয় দেওয়া ইঞ্জিনিয়ার নাজমুল হক যিনি বেনামে এই প্রকল্পের বেশিরভাগ সরকারি কাজের ঠিকাদার, নাজমুল হকের পার্টনার ও জি এম ডি এস এস প্রকল্পের ঠিকাদার গোপালগঞ্জ সদরের গোবরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আফতাবনগর মেরাদিয়া কাঁচাবাজার সংলগ্ন হত্যা মামলার ৩৫ নম্বর আসামি মো. ফয়সাল কবির। ফয়সাল কবিরের এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আফতাবনগর মেরাদিয়া কাঁচাবাজার সংলগ্ন হত্যা মামলার ৩১ নম্বর আসামি শ্যামল, প্রকল্পের সহকারি পরিচালক ও তোফায়েল আহমেদের নাতি পরিচয় দেওয়া দুর্নীতিবাজ নাজমুল সহ দুর্নীতিবাজ অংশটি। আবুল বাশার পিডির পদে বসেই প্রকল্পের বারোটা বাজানোর জন্য তৎপর হয়ে উঠেছেন। সরকারী বিধি বিধান উপেক্ষা করে একটার পর একটা উল্টাপাল্টা আদেশ দিচ্ছেন। ঠিকাদারদের সাথে গড়ে তুলেছেন দহরম মহরম সম্পর্ক। তাদের নিয়ে প্রায় গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে বৈঠক ও গোপন লেনদেন করছেন। পিপিআর এর শর্ত ভংগ করে ঠিকাদারদের কার্যাদেশ ও বিল পরিশোধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। অতি নিমানের কাজ হলেও মোটা অংকের কমিশন নিয়ে ঠিকাদারদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছেন। প্রকল্প পরিচালক হবার পর তিনি তার আপন শ্যালককে অনুমোদন ছাড়াই কন্ট্রাক্টরি কাজ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে নৌ-পরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোঃ শফিউল বারী বলেন, আসলে আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। কেউ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি করলে তাদের ছাড়া দেয়া হবে না।

এছাড়াও এসআরএম ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়া বিভিন্ন কাজ দিয়েছেন পিডি আবুল বাশার যে প্রতিষ্ঠানের মালিক শাহাদাত নামে ভোলা জেলার একজন আওয়ামীলীগ নেতা। নাজমুল হকের বেনামি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এন এস এন্টারপ্রাইজ (তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও জি এম ডি এস এস প্রকল্পের সাবেক ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নাসিমা সুলতানার নামে) ও মুনভিউ-জুমাইরাহ (জুমাইরাহ তার বড় মেয়ের জামাতা। অহিদুন্নবি এবং মুনভিউ জি এম ডি এস এস প্রকল্পের ঠিকাদার গোপালগঞ্জ সদরের গোবরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আফতাবনগর মেরাদিয়া কাঁচাবাজার সংলগ্ন হত্যা মামলার ৩৫ নম্বর আসামি মো.ফয়সাল কবিরের প্রতিষ্ঠান) কাজ না করে বিল ভাগাভাগি করার জন্য প্রকল্প পরিচালক আবুল বাশারের সাথে জোট বেঁধেছেন।সরকারি চাকরি করেও আবুল বাশার ছিল আওয়ামীলীগের সক্রিয় কর্মী। গত ২০২১ সালে আওয়ামী লীগের পক্ষে রচিত তার আর্টিকেলটি এখনো আওয়ামীলীগের লীগের ওয়েবসাইটে রয়েছে। ছাত্র জীবনে তিনি ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে ফ্যাসিস্টের সহযোগী জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক চুন্নুর ভাগিনা হিসাবে প্রভাব দেখাচ্ছেন আবুল বাশার। তাকে টাকার বিনিময়ে শেল্টার দিচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির একজন নেতা। আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসর হওয়া সত্তেও তাকে অন্তর্বতীকালীন সরকারের সময়ে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই বিশেষ রাজনৈতিক তদবীরে। একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা হয়েও প্রায় প্রতিদিন তিনি কোন না কোন বার, ফাইভ স্টার হোটেল অথবা থ্রি স্টার হোটেলে গিয়ে আকন্ঠ মদ পান করেন? অবৈধ স্পা সেন্টারে গিয়ে শরীর ম্যাসাজ বা দেহপসারিনীদের সেবা নেন। সরকারি কর্মচারীর শৃঙ্খলা বিধি মোতাবেক অবশ্যই তিনি এসব অনৈতিক কাজ করতে পারেন না। সারকারী কোন কর্মকর্তা যদি এ ধরনের নোংরা এবং অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন, তবে তিনি অবশ্যই সরকারী চাকুরী শৃংক্ষলা বিধি ভংগের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন এবং তিনি বিভাগীয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এটা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সরকারি কর্মচারীর আচরণ ও শৃঙ্খলা বিধির আইন। কিন্তু সেই আইনকে অবিরাম বৃদ্ধাংগুলি প্রদর্শন করে যাচ্ছেন নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা। গত ৫ বছর ধরে তিনি এ ধরণের শৃংক্ষলা ভংগমূলক কাজে লিপ্ত থাকলেও আওয়ামী ঘরানার কর্মকর্তা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি নৌপরিবহন অধিদপ্তর বা নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। ফলে তিনি এ ধরনের কর্মকন্ডের সকল মাত্রা অতিক্রম করে এখন শীর্ষে পৌছে গেছেন। তার এ ধরনের নোংরা অপকর্মে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ভাবমূর্তি সহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং একই সাথে তার সহকর্মীরা এবং অন্যান্য কর্মকর্তারাও বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন।
জানাগেছে, ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতার সুপারিশে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরে ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার এন্ড এক্সামিনার পদে চাকুরী পান আবুল বাশার । তার গ্রামের বাড়ী ময়মনসিংহ জেলায়। তার বাবা একজন মুদি দোকানদার ছিলেন। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক স্বৈরশাসকের আমলে নিয়োগ পাওয়া সত্ত্বেও এখন তিনি ভোল পাল্টে মস্ত বড় জামাত শিবির এবং বিএনপির পৃষ্ঠপোষক বনে গেছেন। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি চট্টগ্রামে (৩৮ তম ব্যাচ) প্রশিক্ষণকালীন সময়ে তিনি কুলাঙ্গার হিসেবে খ্যাত ছিলেন। তার সময়ে উশৃঙ্খলতার দায়ে বাংলাদেশ এবং মেরিন একাডেমির ইতিহাসে পুরো ব্যাচ বহিষ্কৃত হয় । যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই কুলাঙ্গার মো. আবুল বাশার। এই রাবিশ জীবনযাত্রা উপভোগের আর্থিক যোগানদাতারা হচ্ছেন মার্চেন্ট ও ইনল্যান্ড পরীক্ষার চিহ্নিত দালাল মিশু সেনগুপ্ত, আদনান, মারুফ, মেহেদি, রাশেদি,সাগরসহ আরো অনেকে। মার্চেন্টের ক্লাস-১ থেকে ক্লাস-২, ক্লাস-৩ এর মৌখিক পরীক্ষায় তার ঘুষের রেট হচ্ছে যথাক্রমে: ৭ লাখ, ৫, লাখ ও ৩ লাখ টাকা। ইনল্যান্ড তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণীতে ঘুষের রেট যথাক্রমে ৭০ হাজার, ১ লাখ ও ১.৫ লাখ টাকা। তাছাড়াও আর এক মহা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিনের সাথে মিলে তিনি পানামা সিডিসি ও স্পেশাল ব্যাচের নাম দিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জনকে অবৈধভাবে সিডিসি প্রদান করে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ঘুষ হিসাবে উপার্জন করেছেন। আর সে টাকায় তিনি মাস্তি করে বেড়িয়েছেন। একখানা সেকেন্ডহ্যান্ড টয়োটা গাড়ীও কিনেছেন। গত ২০১০ সালে বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম জাহাজ এম ভি জাহান মনি (যেটি সোমালিয়ান জলদস্যু দ্বারা অপহৃত হয়েছিলো) জাহাজের দ্বিতীয় প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন তিনি সমুদ্রের পানি দ্বারা ইঞ্জিন কুলিং এর ব্যবস্থা করে ইচ্ছেকৃতভাবে ইঞ্জিন নষ্ট করেন। যে কারণে জাহাজ মালিক শাহজাহান তার শিপিং কোম্পানীতে (এস আর শিপিং এ) চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ করেন এই উশৃংখল আবুল বাশারকে। তবে এই রকম ঘটনা তার জীবনে প্রথম নয় একাধিক সূত্র বলছে, সে ক্যাডেট লাইফ থেকেই কোনো কোম্পানিতেই এক বারের পর দ্বিতীয়বার চাকরি করতে পারেননি তার আনপ্রফেশনাল কর্মকান্ডের জন্য। এই ধরনের একজন আন প্রফেশনাল প্রকৌশলী সরকারি চাকরিতে যোগদান করে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে গড়ে তুলেছেন এক অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদদাতা বর্তমান সিএনএস ক্যাপ্টেন মো.গিয়াস উদ্দিন আহমদ।
এ বিষয়ে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার এন্ড এক্সামিনার মো.আবুল বাশার বলেন, এ সব অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে তার এই বক্তব্য মানতে রাজী নন ভুক্তভোগি মহল। তাদের দাবী: তার নিরপেক্ষ ও পক্ষপাত বিহীনভাবে তদন্ত করলেই উল্লেখিত সকল অভিযোগের সত্যতা মিলবে।
এ বিষয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবের বিভাগীয় পদক্ষেপ কামনা করেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Adsense