শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১১:১৯ পূর্বাহ্ন

ঈদ উৎসবে ভোটের রঙ-ঢঙ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, ২০২৫
  • ১১৮ Time View
বিএনপি, জামায়াত ইসলামী ও এনসিপির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতির মাঠে এখন ভোটের উত্তাপ স্পষ্ট। যদিও নির্বাচন কবে হবে তা এখনও ঠিক হয়নি, তবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোরালো দেনদরবার চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের আগে এটিই শেষ ঈদ। ফলে ঈদকেন্দ্রিক ভোটের রাজনীতি জমে উঠেছে।

গত ১৫ বছর বিএনপি ও জামায়াত নেতারা জেলে বা পালিয়ে ঈদ কাটিয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এবারও তারা উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা রাজধানীতে থাকলেও ঈদে নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় থাকেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা রমজান থেকেই এলাকায় জনসংযোগ শুরু করেছেন। জামায়াত ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও ভোটের প্রচারে ব্যস্ত। তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা কেউ কেউ প্রবাসে, কেউ আবার জেলে।

ঈদকে কেন্দ্র করে শহর ফাঁকা হয়ে যায়, গ্রামে মানুষের ঢল নামে। ফলে ঈদের নামাজে দেখা হয় অনেকের সঙ্গে, রাজনীতিকরাও এই সুযোগে ভোটের বার্তা দেন। সামাজিক অনুষ্ঠান, দান-খয়রাত, শুভেচ্ছা পোস্টার—সবই নির্বাচনী আবহ তৈরি করে।

ঈদের পরে রাজনীতির মাঠ আরও উত্তপ্ত হতে পারে। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে। শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার এবং ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ করানোর দাবিও সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর অংশ। এনসিপিসহ অন্য দলগুলো সংস্কার, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ইত্যাদি ইস্যু সামনে এনে আন্দোলন গরম করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিভিন্ন দলই ভোটারদের কাছে যেতে ঈদকেই বড় সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে। পোস্টার, ফেস্টুন, ঈদ উপহার বিতরণ, এমনকি কোরবানির মাংস বিতরণ পর্যন্ত চলছে। এই প্রচারণা আগেও ছিল, তবে এবার আরও বেশি জোরালো।

জামায়াতের প্রার্থীরা কয়েক মাস ধরে এলাকায় সক্রিয়। তারা বিগত ১৬ বছরে কেন এলাকায় যেতে পারেননি, তা ভোটারদের বোঝাচ্ছেন। ঈদ সামগ্রী বিতরণও চলছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বললেন, ‘আমরা মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করি, চাঁদাবাজি-লুটপাটের রাজনীতি করি না।’

বিএনপির পক্ষ থেকেও নেতাকর্মীরা গুম-খুনের শিকার পরিবারগুলোকে ঈদ উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর ব্যানারে উপহার বিতরণ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর ‘মুক্ত’ পরিবেশে ঈদ উদযাপনের সুযোগ পেয়ে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত।

এদিকে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকায় তাদের অনেক নেতাকর্মী বিএনপি-জামায়াত বা এনসিপিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ ইতিমধ্যেই দল বদলে ফেলেছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বললেন, ‘ঈদে মানুষ থাকে নিজ এলাকায়। প্রার্থীরাও তাই এলাকায় গিয়ে বার্তা পৌঁছে দেন। বিএনপির প্রার্থী সংকট নেই। মানুষ ভোট দিতে চায়। সরকার কেন টালবাহানা করছে, তা মানুষ বোঝে।’

সব মিলিয়ে ঈদের আমেজে এবার নির্বাচনের রং স্পষ্ট। ডিসেম্বরের সম্ভাব্য ভোটকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে ঈদও রণকৌশলের অংশ হয়ে উঠেছে।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Adsense