যে ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থবুদ্ধিসম্পন্ন, এবং ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদের মালিক, তার ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব বা আবশ্যক। অর্থাৎ, কারও কাছে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা অথবা এই পরিমাণ অর্থ কিংবা সম্পদ থাকলে, তার ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানি করা আবশ্যক।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
“তাদের (কুরবানির পশু) গোশত ও রক্ত কখনো আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া (পরহেজগারি)। এভাবেই তিনি পশুদের তোমাদের আয়ত্তে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর নামের মহিমা ঘোষণা করতে পারো যে তিনি তোমাদের পথনির্দেশ করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদেরকে সুসংবাদ দাও।”
— (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭)
অন্যদিকে, মাহনাফ ইবনে সুলায়মান (রা.) হতে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে:
“আমরা আরাফায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, ‘হে লোকসকল! প্রত্যেক পরিবারবর্গের জন্য প্রতি বছর কুরবানি করা ওয়াজিব।’”
— (আবু দাউদ, হাদিস: ২৭৭৯)
এই ক্ষেত্রে, কুরবানির পশুটি অবশ্যই সুস্থ ও ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। রোগাক্রান্ত, কানা, খোঁড়া বা গুরুতর অসুস্থ পশু দ্বারা কুরবানি করা অনুচিত। শরিয়তে কুরবানির পশুর গোশত তিন ভাগে ভাগ করার নিয়ম রয়েছে। তবে আমাদের সমাজে কুরবানির পশুর চামড়া বা হাড় বিক্রির প্রথাও রয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো: কেউ যদি কুরবানির গোশত, চামড়া বা হাড় বিক্রি করে, তবে কি তার কুরবানি সহি হবে?
শায়খ আহমাদুল্লাহসহ অধিকাংশ আলেমের মতে, যিনি কুরবানি করেছেন, তার জন্য পশুর গোশত, হাড় বা চামড়া বিক্রি করা জায়েজ নয়। তবে যাকে চামড়া বা গোশত দান করা হয়েছে, সে চাইলে সেগুলো বিক্রি করতে পারে—এটি তার জন্য বৈধ। চামড়া নিজে ব্যবহার করা জায়েজ, এমনকি প্রক্রিয়াজাত করে সেটি ব্যবহার করলেও সমস্যা নেই।
কিছু এলাকায় মানুষ কুরবানির পশুর চামড়া রান্না করে খায়, সেটিও বৈধ। তবে মূলত কুরবানির চামড়া বিক্রি করা উচিত নয়। বরং সরাসরি কারো কাছে দান করে দেওয়া ভালো।
আলী (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে,
“রাসুল (সা.) আমাদের পাঠালেন। আমি কুরবানির পশুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে আদেশ করলেন, এবং আমি তার মাংস বণ্টন করে দিলাম। এরপর তিনি আমাদের আদেশ করলেন, এবং আমি পশুর পিঠের আবরণ ও চামড়াগুলোও বণ্টন করে দিলাম।”
— (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৬০৮)
সম্পাদক
এড. গৌরাঙ্গ বসু (ট্রিপল এম.এ)
প্রকাশক
সবুজ বালা
© ২০২৫ আলোকিত জনপদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত