চার দিনের সরকারি সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার রাতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশে ফিরেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে জানান, “প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।”
এর আগে, শনিবার সকাল ১১টা ২০ মিনিটে টোকিওর নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
চার দিনের জাপান সফরে ড. ইউনূস টোকিওতে প্রায় ২০টি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে একটি ছিল জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবার সঙ্গে বৈঠক, যা সফরের তৃতীয় দিনে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে উভয় নেতা চলতি বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষরের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ১.০৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন, যা বাজেট সহায়তা ও রেলপথ উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে।
একই দিনে উভয় দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরিত হয়:
১. অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু পরিবর্তনের সহনশীলতা বৃদ্ধিতে ডেভেলপমেন্ট পলিসি ঋণ (৪১৮ মিলিয়ন ডলার)
২. জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েল গেজ ডাবল লেন রেলপথ প্রকল্পের ঋণ (৬৪১ মিলিয়ন ডলার)
৩. মানবসম্পদ উন্নয়ন বৃত্তির জন্য অনুদান (৪.২ মিলিয়ন ডলার)।
এছাড়া, প্রধান উপদেষ্টা ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার’-এ বক্তব্য রাখেন, যেখানে দুই দেশের মধ্যে অর্থনীতি, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সহযোগিতার বিষয়ে ছয়টি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরিত হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার, বাংলাদেশ ও জাপান মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সহজীকরণে দুটি সমঝোতা স্মারকে সই করে। জাপানে শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের মানবসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই সমঝোতা স্মারকগুলো টোকিওর হিরাকাওচো চিয়োদা সিটিতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত মানবসম্পদ সেমিনারে স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে ড. ইউনূস উপস্থিত ছিলেন। জাপানি কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত এক লাখ কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
এছাড়া, অধ্যাপক ইউনূস ‘নিক্কেই ফোরাম: ফিউচার অব এশিয়া’ শীর্ষক সম্মেলনে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সফরের শেষ দিনে সোকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সামাজিক উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে নিক্কেই এশিয়া পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইউনূস চার দিনের সফরে গত ২৮ মে টোকিও গিয়েছিলেন।
Leave a Reply