শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ০১:২৭ অপরাহ্ন

“বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক আস্থা আরও দৃঢ় হোক”

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫
  • ১০৭ Time View

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস চার দিনের (২৮-৩১ মে) সরকারি সফরে জাপান যাচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তিনি টোকিও পৌঁছাবেন এবং বিকেলে জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লিগের প্রেসিডেন্ট তারো আসোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

আগামী ২৯ মে প্রধান উপদেষ্টা টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনারে অংশগ্রহণ করবেন এবং বিশেষ বক্তব্য প্রদান করবেন। সেখানে তিনি ভবিষ্যতে জাপানের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মশক্তি পাঠানোর সম্ভাবনা ও প্রস্তুতি নিয়ে আলোকপাত করবেন।

সফরকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-এর প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ নির্ধারিত রয়েছে। এ সময় জাইকার চলমান প্রকল্পসমূহের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগিতায় জাইকার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হবে।

৩০ মে সকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবারের নেতৃত্বে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের আগে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। বৈঠকে কৌশলগত অংশীদারত্ব, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কৃষি, অবকাঠামো উন্নয়ন, মানবসম্পদ, রোহিঙ্গা সংকটসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

ওই দিন দুপুরে জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো)-এর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ-জাপান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করবেন। এরপর বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাপানি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন এবং পরে “বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার”-এ বক্তব্য দেবেন।

এদিন বিকেলে জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করা হবে।

এই সফরে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার মধ্যে বিনিয়োগ, জ্বালানি ও প্রযুক্তিগত খাতে সহযোগিতা সম্পর্কিত চুক্তি অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও, বাজেট সহায়তা ও জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ বিষয়ে “এক্সচেঞ্জ অব নোটস” স্বাক্ষরিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ এই সফরে জাপানের কাছ থেকে সহজ শর্তে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা চাইবে। বিশ্বাস করা হচ্ছে, জাপান সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব আরও দৃঢ় করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং যেসব মতপার্থক্য রয়েছে, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপানি শিক্ষার্থী, বুদ্ধিজীবী ও কূটনীতিকরা বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। জাপানের জনগণ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সেই সহানুভূতি আজও আমাদের বন্ধুত্বের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। একদিকে বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রাম, অন্যদিকে জাপানের উন্নত প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা—এই মিলনে গড়ে উঠেছে একটি দৃঢ় বন্ধন।

গত ৫৪ বছর ধরে জাপান বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে একটি বিশ্বাসভিত্তিক, কার্যকর এবং ফলপ্রসূ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

প্রধান উপদেষ্টার এই সফর দুই দেশের বন্ধুত্ব ও আস্থার সম্পর্ককে আরও গভীর ও সুদৃঢ় করবে বলে আমরা আশাবাদী। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশ ও জাপান বাস্তবসম্মত ও সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আগামী দিনগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারে একসঙ্গে কাজ করবে—এই প্রত্যাশা রইল।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Adsense