মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পের মধ্যে সামরিক জান্তার বিমান ও ড্রোন হামলা অব্যাহত
ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট মানবিক সংকটের মধ্যেও মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, যখন ভূমিকম্পে হাজারো মানুষ বিপর্যস্ত, তখনও সামরিক বাহিনী হামলা বন্ধ না করে উল্টো তৎপরতা বাড়িয়েছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন নিহত হয়েছেন এবং ৩ হাজার ৪০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। বহু মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
গত শুক্রবার ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প দেশটির সাগাইং অঞ্চলকে সবচেয়ে বেশি কাঁপিয়ে দেয়। এছাড়া বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইরাবতী নদীর ওপর একটি সেতু ভেঙে পড়ায় উদ্ধারকর্মীরা দুর্গত অঞ্চলে পৌঁছাতে পারছেন না।
এই সংকটের মধ্যেই কারেন রাজ্যে বিমান হামলা চালিয়েছে সামরিক বাহিনী বলে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংগঠন ফ্রি বার্মা রেঞ্জার্স। তারা জানিয়েছে, কেএনইউ’র সদর দপ্তরের কাছাকাছি এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে।
এক বিবৃতিতে কেএনইউ বলেছে, “সামরিক বাহিনীর বর্তমান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ভূমিকম্প-দুর্গতদের সাহায্য করা। কিন্তু তারা বরং নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।”
ভূমিকম্পের পর আসিয়ান জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একটি জরুরি বৈঠক করেছেন। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান মিয়ানমারে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে সামরিক জান্তার মুখপাত্র রয়টার্সের অনুরোধ সত্ত্বেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ও গণতন্ত্রপন্থিরা জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, যা দেশটিতে গৃহযুদ্ধের তীব্রতা বাড়িয়ে তুলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভূমিকম্পের প্রভাবে সামরিক অভিযান কমবে বলে ধারণা করা হলেও বাস্তবে উল্টো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। জান্তা বাহিনীর হামলা মানবিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে।
মিয়ানমারের জন্য এখন জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা ও যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। তবে সামরিক জান্তার বিমান হামলা অব্যাহত থাকায় দেশটি আরও গভীর সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সম্পাদক
এড. গৌরাঙ্গ বসু (ট্রিপল এম.এ)
প্রকাশক
সবুজ বালা
© ২০২৫ আলোকিত জনপদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত