মাদারীপুরের চরমুগরিয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের দূর্নীতির মহোউৎসব। মহাবিদ্যালয়টি পরিচালনায় কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই হিসাব বিভাগ নিজের হাতে নিয়ে ইচ্ছেমত করে যাচ্ছেন অনিয়ম ও দূর্নীতি। হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। অভিযোগ চরমুগরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ মো: হান্নান মোল্লার বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, অধ্যক্ষ মো: হান্নান মোল্লা ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর অত্র মহাবিদ্যালয়ে যোগদানের কয়েক মাস পর হিসাব রক্ষকের সকল হিসাব বহিসহ সব কিছুই নিজের হস্তগত করেন। এর পর থেকে একটানা ১০ বছর নিজের খেয়াল খুশি মত চালিয়েছেন হিসাব বিভাগ। একই সাথে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড নামে করেন বিপুল পরিমান অর্থ লোপাট অথচ শিক্ষক কর্মচারীদের ৩০ মাসের বাড়ি ভাড়া এবং ১০ টি ঈদ বোনাস সহ প্রায় ১ কোটি টাকা এখনও বকেয়া।
এসব বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎ এ অধ্যক্ষের সংগে কথা বলতে গেলে তিনি জানান, “সৈয়দ মিজানুর রহমান হিসাব রক্ষক ছিলেন না। তিনি ছিলেন ৩য় শ্রেনীর অফিস সহকারী। হিসাব রক্ষক হিসেব অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করার জন্য মিজানুর রহমান কে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা অতিরিক্ত পরিতোষিক প্রদান করা হতো। সৈয়দ মিজানুর রহমান হিসাব ভালো বুঝতেন না তাই তাকে এ দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হিসাব রক্ষক মিজানুর রহমান জানান, ১৯৯৩ সালে তিনি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চরমুগরিয়া মহাবিদ্যালয়ে হিসাব রক্ষক পদে নিয়োগ লাভ করেন এবং বিধিমালা অনুযায়ী কলেজের হিসাব রক্ষক কলেজের সকল আয় ব্যয়ের হিসাব ক্যাশবহি ও রেজিস্ট্রার খাতার মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ করেন। কিন্তু অধ্যক্ষ তার আর্থিক অসঙ্গতি আড়াল করার উদ্দেশ্যে কলেজের হিসাব রক্ষক সৈয়দ মিজানকে হিসাব রক্ষণের কোনো দায়িত্ব দিতেন না। তিনি অধ্যক্ষের করা অভিযোগ সম্পুর্ন বানোয়াট এবং মিথ্যা বলে জোর দাবি জানান। গত ১১/০৮/২০১৮ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত অত্র কলেজের গভর্নিং বডির সভার ৮ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক তৎকালীন সভাপতির নির্দেশে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশেষ নিরীক্ষা কমিটি গঠিত হয়।
উক্ত কমিটির আহব্বায়ক জনাব আজহারুল ইসলাম,সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(উপ সচিব, স্থানীয় সরকার),মাদারিপুর জেলা কর্তৃক সুপারিশকৃত ও প্রকাশিত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায় যে ২০১৩ সালের ১লা অক্টোবর হতে ২০২১ সালের ৩০ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কলেজ আয়ের মধ্যে ব্যাংকে জমাযোগ্য মোট অর্থের পরিমান ছিলো ৪ কোটি ৭৫ লক্ষ ৮৩ হাজার ২ শত ৫৪ টাকা। এর মধ্যে তিনি কলেজের গভর্নিং বডি এবং অধ্যক্ষের যৌথ সাক্ষরে পরিচালিত একাউন্টে মোট জমা দিয়েছেন ২ কোটি ২০ লাখ ৯৩ হাজার ৩১৩ টাকা ৫৮ পয়সা।অন্যদিকে তাঁর একক সাক্ষরে পরিচালিত ব্যাংক একাউন্টে জমা দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৫০ লক্ষ ৩৬ হাজার ৩ শত ৮১ টাকা এবং কলেজ আয়ের বাকি ১ কোটি ৪ লক্ষ ৫৩ হাজার ৫ শত ৫৯ টাকা ৪২ পয়সা তিনি কলেজের কোনো একাউন্টেই জমা দেন নাই।
বিধি মোতাবেক তাঁর নিজের নামে পরিচালিত একক একাউন্টে বোর্ড এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পরিচালনার ফি ছাড়া অন্য কোনো ধরনের আয়ের টাকা জমা বা উত্তোলনের বিধান না থাকলেও তিনি এই একাউন্টে ১ কোটি ৫০ লক্ষ ৩৬ হাজার ৩ শত ৮১ টাকা বিধি বহির্ভূত ভাবে জমা দিয়েছেনএবং গভর্নিং বডির সভাপতির লিখিত অনুমতি ও অবগতি ব্যতিত টাকা উত্তোলন করে ইচ্ছামত ব্যয় করে কলেজ তহবিলের টাকা তছরুপ করেছেন যা বিধি বহির্ভূত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়ন একাডেমিক ভবন নির্মাণ, শিক্ষকদের ডর্মেটরি নির্মান, কলেজের মুল ফটক এর পূন:নির্মান, পুরাতন ভবনের সংস্কার, মসজিদ, মন্দিরসহ পূন:নির্মান ও সংস্কার ইত্যাদি কাজ করার দায়িত্ব শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের। যা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীর নকশা,দরপত্র আহ্বান এবং প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারি লাইসেন্স প্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানরে মাধ্যমে হয়ে থাকে।
কিন্তু তিনি এসকল নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র কয়েকজন রাজমিস্ত্রী নিয়ে তার একক সিদ্ধান্তে গত ১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সাল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ সাল পর্যন্ত ৮৪ লাখ ৮৩ হাজার ৩ শত ১৭ টাকা উন্নয়নের কাজে ব্যয় করেছেন যা সম্পূর্ণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধারণত সরকারি বিভিন্ন ধরনের অনুদানের টাকা দিয়ে হয়ে থাকে। কিন্তু তিনি গত ১০ বছরে একাডেমিকসহ অন্যান্য ভবন নির্মান এবং সংস্কারের কোনো চাহিদা ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্টকে জানান নি। সর্বশেষ তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে মাউশির ঢাকা অঞ্চল-৩ এর পরিচালক জনাব মনোয়ার হোসেন বিষয়টি তদন্তে করেন।
এসব নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি প্রতিবেদককে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্তের প্রতিবেদন তিনি মহাপরিচালক (মাউসি)বরাবর প্রেরণ করেছেন বলে জানান। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য কারনে অদ্যাবধি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনোরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি বলে জানা যায়। সর্বোপরি অধ্যক্ষ মো হান্নান মোল্লা একজন দাম্ভিক বদমেজাজি ধরনের মানুষ।
শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়োগে মোটা অংকের ঘুষ নেয়া,পরবর্তীতে তাদের সংঙ্গে কারনে অকারনে খারাপ আচরন, বেতন কর্তন এমনকি শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করা সহ নানান ধরনের দূর্ব্যবহারের তথ্যও পাওয়া যায়। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও অনতিবিলম্বে এই দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ফ্যাসিস্ট একজন শিক্ষককে অধ্যক্ষের পদ হতে অপসারন করে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জোর দাবি উঠেছে।
Leave a Reply