আমরা নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ। মাছ, মাংস, এবং ডিমের কথা ভাবতেও পারি না। আমাদের শেষ ভরসা সবজি, কিন্তু তারও দাম আকাশ ছোঁয়া। ডাল ও আলু দিয়ে ভাত খেতে পর্যন্ত কষ্ট হয়ে যায়।
এভাবেই রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে আসা মো. রোকন হোসেন তার কষ্টের কথা প্রকাশ করেন।
দীর্ঘদিন ধরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, কাঁচাবাজার, মাছ-মাংস, এমনকি মসলাজাত পণ্যের দামে সাধারণ মানুষ দিশাহীন। বাজারের পরিস্থিতি যেন ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। যদিও বিভিন্ন সময় কিছু পণ্যের দাম ওঠানামা করে, বাজারের মূল প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী। মাছ, মাংস, ডিম এবং সবজির দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে, যা সাধারণ ভোক্তাদের জন্য বিশাল দুশ্চিন্তার কারণ।
বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট ও হাতিরপুলসহ বেশ কয়েকটি বাজার পরিদর্শন করে দেখা যায়, প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়ে গেছে। আলু ও পেঁপে বাদে ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বাজারগুলোতে প্রতি কেজি ধনেপাতা ৩০০-৩৫০ টাকা, বরবটি ১৩০ টাকা, বেগুন ১০০-১২০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ১০০ টাকা, ধুন্দুল ৯০-১০০ টাকা, করলা ৮০-১০০ টাকা, মুলা ৮০-১০০ টাকা, লতি ১০০ টাকা, কহি ১০০ টাকা এবং পটোল ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি শিম ২৫০-৩০০ টাকা, টমেটো ২৪০ টাকা, গাজর ১৩০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা, শসা ৮০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০-১০০ টাকা, এবং আলু ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শাকের বাজারে প্রতি আঁটি লাউশাক, পালংশাক ও পুঁইশাক ৪০ টাকা, লালশাক ২০ টাকা, পাটশাক ১৫ টাকা, ডাঁটাশাক ২০ টাকা, মুলাশাক ২০ টাকা এবং কলমিশাক ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দাম ৩০০-৩২০ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, সাম্প্রতিক বন্যা এবং বৃষ্টির কারণে সবজির সরবরাহ কমেছে, যা দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তবে শীত মৌসুমের সবজি বাজারে আসতে শুরু করলে দাম কমতে পারে।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা রবিউল ইসলাম জানান, পাইকারি বাজারে সবজি কিনতে বেশী দামে কেনা হচ্ছে। প্রায় সব সবজির দাম ১০০ টাকার ওপরে থাকায় বিক্রিও কমে গেছে।
এদিকে, মাছের দাম আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, এবং চাষের কৈ ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নদীর পাঙাশের দাম ৯০০ থেকে ১,২০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং দেশি কৈ ১,৩০০ থেকে ১,৭০০ টাকা।
মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণহীন। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৬০-২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১,০০০ থেকে ১,১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১,০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দামও বেড়ে গেছে। খুচরায় দেশি পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এ ধরনের দাম দেখে ক্রেতারা হতাশ। তারা বলেন, সরকার পরিবর্তন হলেও বাজার সিন্ডিকেটের প্রভাব একই রকম। ক্রেতাদের পকেট যেন সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।
ক্রেতারা টাস্কফোর্স গঠনের দাবি করছেন, তবে বাজারে টাস্কফোর্সের কার্যক্রম নেই। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারের অস্থিরতার সুযোগ নিচ্ছেন। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সেগুলোর কার্যকরী প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।
সম্পাদক
এড. গৌরাঙ্গ বসু (ট্রিপল এম.এ)
প্রকাশক
সবুজ বালা
© ২০২৫ আলোকিত জনপদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত