লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সদরদপ্তরে ইসরায়েল ভয়াবহ বোমা হামলা চালায়, যেখানে ধারণা করা হয় গ্রুপটির প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ অবস্থান করছিলেন। ওই তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর ইসরায়েল সেখানে টনকে টন বোমা বর্ষণ করে, যা নাসরুল্লাহসহ বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে।
ইরান অভিযোগ করে যে নাসরুল্লাহকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইসরায়েল যে বোমা ব্যবহার করেছে, সেটি ছিল বাংকার বাস্টার। এই ভয়াবহ বোমা গভীর মাটির নিচে থাকা বাংকার ভেদ করে আঘাত হানতে সক্ষম।
শুক্রবার, বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় আবাসিক এলাকাগুলোতে ইসরায়েল একাধিকবার হামলা চালায়। তারা সেখানে ৫ হাজার পাউন্ডের বেশ কয়েকটি বাংকার বাস্টার বোমা ফেলে। যদিও ইসরায়েল এ হামলার বিস্তারিত প্রকাশ করেনি, দেশটির সম্প্রচার মাধ্যম চ্যানেল টুয়েলভ দাবি করেছে, প্রায় ৮৫টি বাংকার বাস্টার বোমা ফেলা হয়, যার প্রতিটি এক টন বিস্ফোরক বহন করছিল।
বাংকার বাস্টার বোমা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী তৈরি করে, বিশেষ করে মাটির গভীরে থাকা সামরিক স্থাপনা বা মজবুত সাইট ধ্বংস করার জন্য। প্রচলিত গোলাবারুদ দিয়ে এ ধরনের লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করা সম্ভব নয়, তাই আধুনিক যুদ্ধে এই বোমার কদর বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক আইনে বাংকার বাস্টার নিষিদ্ধ নয়, তবে আবাসিক এলাকায় এর ব্যবহার জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী আইন লঙ্ঘন। নাসরুল্লাহ হত্যায় ঠিক কোন ধরনের বোমা ব্যবহার করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়, তবে এ অঞ্চলে এর আগে এই ধরনের বোমা ব্যবহৃত হয়েছে।
১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে ইরাকি বাহিনীর বাংকার ধ্বংস করতে GBU-28 বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল, যার ওজন প্রায় ৫ হাজার পাউন্ড। এতে লেজার গাইডেড সিস্টেম থাকার কারণে এটি লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। GBU-37 বোমাটিও গাইডেড, তবে এটি জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে, ফলে খারাপ আবহাওয়াতেও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ভাণ্ডারে সবচেয়ে শক্তিশালী বাংকার বাস্টার হলো GBU-57, যা Massive Ordnance Penetrator (MOP) নামেও পরিচিত। এ বোমার ওজন ৩০ হাজার পাউন্ড, এবং এটি বিস্ফোরিত হওয়ার আগে কংক্রিটের ২০০ ফুট এবং মাটির ৬০ ফুট গভীরে প্রবেশ করতে পারে। ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের মাটির নিচে থাকা পরমাণু স্থাপনায় হামলার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত।
Leave a Reply