বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। দীর্ঘ এক যোগেও বেশি সময় ধরে তিনি ঢালিউডে কুইন নামেই পরিচিত।তিনি যেমন জনপ্রিয় তেমনি নানা ধরনের সামাজিক কাজেও দেখা যায় এই নায়িকাকে।
করুনা কালেও তিনি রাস্তায় নেমে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। বর্তমানে বন্যার্তদের পাশে দাড়ালেন এই নায়িকা-এ ব্যাপারে জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন- বন্যাদুর্গত এলাকায় যারা আছে, সেই মানুষদের জন্যই আমি আজকের অপু বিশ্বাস। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো বলে-কয়ে আসে না বা কারও হাত থাকে না কিন্তু আমার কাছে মনে হয় আমার প্রাপ্তিটা তাদের জন্যই। যখন সুযোগ আসে সেই প্রাপ্তির সম্মান করা উচিত।
আমি ত্রাণ বলি না এগুলো উপহারসামগ্রী, ভালোবাসা। আমার কাছে মনে হয়, যে মানুষগুলোর কাছে আমরা ভালোবাসা পৌঁছে দিচ্ছি, সেই মানুষগুলো তা নেওয়ার মানুষ নন, তারা সবাই সচ্ছল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তারা তাদের থাকা-খাওয়া, বাসস্থান, পরিবার সবকিছু বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। সে জায়গা থেকে আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা যা দিচ্ছি, এটা আসলে ভালোবাসাসামগ্রী।
ব্যক্তিগতভাবে বলতে গেলে, আমি অপু বিশ্বাসের পেছনেও তাদের ভালোবাসা চাওয়া-পাওয়া আছে। তারা যদি হলে ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট না কাটতেন, তাহলে তো অপু বিশ্বাসের সিনেমাটা চলত না। সে জায়গা থেকে আমার ক্ষুদ্র ভালোবাসা তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। যেমনটা টিএসসিতে আমার লোক দিয়ে এসেছে। তাদের সঙ্গে আমি যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম, কিন্তু যেহেতু আমার নিজের সন্তান অনেক ছোট আর সবচেয়ে বড় কথা, ঢাকা শহরেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই সময়ে বাচ্চারা অসুস্থ হয়।
সবকিছু মিলিয়েই আমি যাইনি। আমার পক্ষ থেকে প্রতিনিধিকে পাঠাচ্ছি এবং সাধ্যমতো উপহারসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আপনারা জানেন যেদিন থেকে আমার সন্তান পৃথিবীতে এসেছে, সেদিন থেকে আমার নারীদের প্রতি বরাবরের মতো দুর্বলতা কাজ করে। এই সময়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে সবারই বিস্কুট-চানাচুর, পানি প্রয়োজন কিন্তু যারা বাচ্চা, যারা বুকের দুধ পান করে তারা ঠিকমতো তা খেতে পারবে না।
সে জায়গা থেকে ফিডার, বাচ্চাদের দুধ, বিশেষ করে নারীদের জন্য এই সময়ে প্যাডের প্রয়োজন হয়। এটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হয়তো লজ্জার খাতিরে আরেকজনের কাছে চাইতে পারে না। নারীদের চিন্তা করে এই কয়েকটা জিনিসে আমি ব্যক্তিগতভাবে ফোকাস দিয়েছি এবং পাঠিয়েছি। ফেসবুক বা অন্যত্র প্রচুর শুনতে পাচ্ছি মানুষ কুমিল্লা-ফেনীতে যাচ্ছে। কিন্তু আমি পাঠিয়েছি খাগড়াছড়িতে। আমার কোনো টিম নেই, যাদের সঙ্গে যুক্ত আছি তারা যাচ্ছে খাগড়াছড়ির দিকে।
তবে আমাদের ইমরান হাসুর (অভিনেতা) মাধ্যমে ফেনীতে, আরেকটা ফাউন্ডেশনে দিয়েছি তারা মনে হয় কুমিল্লার দিকে যাচ্ছে। পাশাপাশি টিএসসিতে আমি আমার প্রতিনিধির মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য পাঠিয়েছি। যেহেতু তাদের কাছে প্রচুর জামাকাপড় আছে, আমি মনে করি আর্থিক সহযোগিতা করলে ভালো হবে। আসলে সত্যিই ইচ্ছে আছে, কীভাবে বলে প্রকাশ করব! বলতে খুব দুঃখ লাগে, আমাদের দেশে কেউ ছবি তোলে আবার কেউ ছবি বাণিজ্য করে।
আমি মনে করি যারা বাণিজ্য করতে গেছে, এমন মেন্টালিটির মানুষের পরিচয় পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু আমি জানি আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন, কাউকে উপকার করলে যেন কেউ না দেখে। কিন্তু আপনি যখন সাধ্য অনুযায়ী উদ্যোগী হবেন, তখন অন্য পাঁচটা মানুষও কিন্তু আগ্রহী হবে যে না আমিও আসি। আবার তার মধ্যে অনেকে এটাকে বাণিজ্য মনে করছে। সর্বোপরি আমি একটি কথাই বলতে চাই, প্রত্যেকটা মানুষের বিবেকের উন্মোচন হোক এবং বিবেকবান হোক।
সব মানুষের কাছে আমার চাওয়া থাকবে সবাই যেন নিজের বিবেক-মনুষ্যত্বের জায়গা থেকে যুক্ত থাকে। সে ক্ষেত্রে যারা ছবি দিচ্ছেন, তাদের নেগেটিভলি বলার কিছু নেই। সবাইকে বলব, বিবেক ও মানবিকতার উদয় হোক। করোনাকালের কথা যদি বলি, ওই মুহূর্তে কেউই বের হচ্ছিলেন না।
আমি যখন বের হয়েছিলাম, তখন কিন্তু কেউই ছিল না। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমাদের কাছে যদিও এক মাসের খাবার মজুদ আছে কিন্তু যাদের কাছে ১ দিনের খাবারও নেই, তাদের পাশে দাঁড়ানো দরকার। আমার ডাকার মাধ্যমে যদি অনেক মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়, তাহলে আমি করলাম না হয় শোঅফ।
সম্পাদক
এড. গৌরাঙ্গ বসু (ট্রিপল এম.এ)
প্রকাশক
সবুজ বালা
© ২০২৫ আলোকিত জনপদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত