শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
একসঙ্গে কতটি কোয়েলের ডিম খাওয়া নিরাপদ? হিরো আলম ঘুমের ওষুধ খেয়ে হাসপাতালে, ২৪ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে ঘোষিত সময়ের মধ্যে স্থানীয় নির্বাচন সম্ভব নয়: সালাহউদ্দিন হতাশায় শেষ বাংলাদেশ, জয়ের কাছাকাছি শ্রীলঙ্কা পাকিস্তানের সঙ্গে স্থগিত, বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন চুক্তি করতে আগ্রহী ভারত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য কঠোর নির্দেশনা, অমান্য করলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা আবারও ৪ দিনের রিমান্ডে ‘নগদ’-এর নেতৃত্বে নতুন চেয়ারম্যান ডিভোর্সের গুঞ্জন নিয়ে মুখ খুললেন ঐশ্বরিয়া ইউক্রেন বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) অনুরোধ জানাবে।

নারায়নগঞ্জে গৃহবধু দোলা হত্যাকান্ডের মামলা নেয়নি পুলিশ

এম রাসেল সরকার
  • Update Time : সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০২৪
  • ২৫৩ Time View

১১মাস বয়সি আব্দুল্লাহ জানে না ওর মা এখন কোথায়। সিঙ্গাপুর প্রবাসী পিতার নির্দেশনায় দাদী ও চাচা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তার মাকে। নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন পশ্চিম দেলপাড়া এলাকায় ভাসুর-শ্বাশড়ী গং কর্তৃক নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের শিকার গৃহবধু আলিফা সুলতানা দোলা হত্যাকান্ডের মামলা গ্রহন করেনি ফতুল্লা থানার ওসি নুরে আজম। বরং বাদী পক্ষ অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে এঘটনাকে একটি অপমৃত্যুর মামলা করার প্রস্তাব দিয়ে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।

তবে ঘটনার প্রাথমিক তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বাপ্পি সরদার ঘটনাস্থলে অভিযুক্ত আসামীদের সাথে প্রকাশ্যে কথাবার্তা বলে তাদেরকে রহস্যজনক কারনে ছেড়ে দিয়েছেন। স্থানীয়দের মুখে গুণজন শোনা যাচ্ছে, সিঙ্গাপুরের গরম গরম টাকার বিনিময়ে থানা-পুলিশকে ম্যানেজ করে নিয়েছে হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী বিল্লাল শেখ ও তার পরিবার।

বিল্লাল শেখ যেকোন সময় সিঙ্গাপুরে চলে যাওয়ার আশংঙ্কাও রয়েছে। আর এসব ঘটনায় নিহত দোলার পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা ও শোকের মাতম। ১১মাস বয়সি নাতি আব্দুল্লাহকে কোলে নিয়ে বাকরূদ্ধ দোলার বৃদ্ধ বাবা দেলোয়ার মোল্লা। ঘটনার বিবরনে জানা গেছে, ফতুল্লা থানাধীন পূর্বদেলপাড়া পেয়ারা বাগান এলাকার দেলোয়ার মোল্লার মেয়ে আলিফা সুলতানা দোলা (১৯)কে বিগত আড়াই/তিন বছর পূর্বে স্কুলে আসা যাওয়ার পথে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করতো পার্শ্ববতী পশ্চিম দেলপাড়া আল-মদিনা মসজিদ এলাকার মৃত ইদ্রিস শেখের ছেলে আশিক শেখ(২৩)। বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন সময়ের সাবেক ইউপি মেম্বারের অধীনে একাধিকবার শালিশও করা হয়।

কিন্তু আশিক পিছু হটে না। একসময় দোলা-আশিকের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু দোলার পরিবার এতে সম্মতি না থাকায় মাঝে মধ্যেই দুই পরিবারের মধ্যে বাকবিতন্ডতা হয়। একপর্যায়ে স্থানীয় জামান মেম্বার প্রেমিক আশিকের পরিবারের অভিবাবক দাবী করে মধ্যস্থতা করেন এবং ৬জুন-২০২২ সালে পারিবারিকভাবেই আশিক-দোলার বিবাহবন্ধন সম্পন্ন হয়। এসময় দোলার পরিবার মেয়ে জামাই আশিককে সাড়ে ৩ ভরি স্বর্ণালংকার ও ঘর সাজানোর জন্য অন্তত ৪লাখ টাকা ফার্নিচার ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী যৌতুক প্রদান করেন।

বিয়ে পরবতী ১মাস ভালোই চলে তাদের নতুন সংসার। ১মাস পরে আশিক চলে যায় সিঙ্গাপুরে। শ্বাশুড়ী বিলকিস বেগম ও তার বোন মিলে দোলার উপর শুরু করেন মানসিক নির্যাতন। বিদেশ থেকে আশিক দাবী করেন মোটা অংকের যৌতুকের টাকা। কয়েকমাস পরে আশিক ৩মাসের ছুটিতে বাড়ীতে আসেন। তিনমাস বাড়ীতে অবস্থান করে দোলাকে মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি শাররিক নির্যাতনও করেন।

একসময় দোলার মা বাধ্য হয়ে মেয়ের সুখের জন্য ৫লাখ টাকা আশিকের বাড়ী নির্মানের কাজের জন্য যৌতুক দেন। তিনমাস ছুটি কাটিয়ে আশিকও সিঙ্গাপুরে চলে যান। এদিকে আশিকের মা, তার বড়ভাই বিল্লাল শেখ ও বিল্লালের স্ত্রী মিতু বেগমের পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাড়ী ছেড়ে পরিবার নিয়ে অন্যত্র ভাড়া বাসায় চলে যান আশিকের মেঝুভাই আক্তার শেখ।

এই সুযোগে দোলার উপর নির্যাতনে যুক্ত হয় বিল্লালের স্ত্রী মিতু বেগম সহ তাদের খালা শ্বাশুড়ী মনোয়ারা বেগম। শুরু করেন আশিকের সংসার থেকে দোলাকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা। এরই মধ্যে দোলার কোলে জন্ম নেয় একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান আব্দুল্লাহ। এসব ঘটনার সুত্র ধরে ১৮জুলাই-২০২৪ তারিখ সকাল ১০দিকে প্রবাসী আশিকের নির্দেশে তার বড়ভাই বিল্লাল, ভাবি মিতু বেগম, মা বিলকিস বেগম, খালা মনোয়ারা একে অপরের যোগসাজসে দোলাকে নির্মমভাবে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক রচনা করেন। নিহত দোলার মা পান্না বেগম জানান, ঘটনার দিন সকালে আসামী বিল্লালের স্ত্রী মিতু বেগম ফোন করে দোলার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে জরুরী ভিত্তিতে তাদের বাড়ীতে যেতে বলেন। কারন তার স্বামী বিল্লাল খুবই অসুস্থ্য।

একথা শোনে দোলার মা-বাবা ওই বাড়ীতে গিয়ে দেখতে পান মেইন গেইটের ভেতর সিড়িকোঠার মধ্যে দোলার নিথর দেহ পড়ে আছে। প্রতিবেশীদের কেউ কেউ তার মাথা পানি ঢালছে, কেউ বলেছে স্টক করেছে, কেউ বলেছে আত্মহত্যা করেছে, কেউ বলছে মারধর করা হয়েছে, প্রচন্ড চিৎকার চেচামেচির শব্দ শোনা গেছে, নানা জনের নানান কথা। এসব দেখে দোলার মা-বাবা দিগ¦বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েন। এদিকে হত্যাকারীরা দোলার মাকে ফোনে মিথ্যা খবর দিয়ে সবাই বাড়ী থেকে পালিয়ে যান।

তবে উপস্থিত লোকজনের সহযোগিতায় দোলার মৃতদেহকে অজ্ঞান ভেবে তাকে নিয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের নৈরাজ্যকর পরিবেশের মধ্যে একাধিক হাসপাতালে ছুটে যান। সবশেষে নারায়নগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) গিয়ে ডাক্টারদের নিকট থেকে জানতে পারেন দোলা বেঁচে নেই। দোলার পরিবার লাশ নিয়ে বাড়ী ফিরে ফতুল্লা থানা পুলিশকে খবর দিলে এসআই বাপ্পি সরদার ঘটনাস্থলে আসেন।

দোলার সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ মর্গে পাঠান এবং হত্যার ঘটনাস্থল অর্থাৎ দোলার শ্বশুর বাড়ীতে গিয়ে দোলার মাকে বাড়ীর বাইরে অপেক্ষামান রেখে হত্যাকারী বিল্লাল শেখ ও তার মা বিলকিস বেগমের সাথে একাকিত্বে আলোচনা সেরে চলে আসেন। অতপর এসআই বাপ্পি সরদার নিহত দোলার মাকে থানায় ডেকে নিয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করার প্রস্তাব দেন এবং ‘অপমৃত্যুর সংবাদ প্রসঙ্গে’ মনগড়া লিখিত বক্তব্যের কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করেন।

পুলিশের এসব ঘটনায় হতাশ হয়ে দোলার ভাই তার মাকে নিয়ে বাড়ী চলে আসেন। ফতুল্লা থানার এসআই বাপ্পি সরদার বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমার কাছে মনে হয়েছে ঘটনাটি আত্মহত্যা। বিষয়টি ওসি স্যারকে জানালে তিনি অপমৃত্যুর মামলা নিতে পরামর্শ দেন। একারনে দোলার মা পান্না বেগমকে অপমৃত্যুর মামলা করতে বলেছিলাম। কিন্তু সে অপমৃত্যুর মামলা করবে না।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দোলা নিজের ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না বেঁধে ফাসি দিয়ে থাকলে তার লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকতো, ঘরের দরজা বন্ধ থাকতো। কিন্তু কে বা কারা দরজা খুলে লাশ নিচে নামিয়ে দোতলা থেকে নিচতলার সিড়িকোঠার পাশে এনে রাখলো, তারা পুলিশের জন্য অপেক্ষা করলো না কেন?, তারা তো দোলাকে বাচানোর উদ্দেশ্যে হাসপাতালেও নিয়ে যায়নি। তারা দোলার মা-বাবাকে খবর দিয়ে সবাই বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে গেলেন কেন। ওড়না দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলন্ত থাকা অবস্থায় দোলার গলার নিচের অংশের ওড়না কেটে লাশ নামানো কোনমতেই সম্ভব না, এতে গলা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে শতভাগ।

সময়ও লাগবে অনেক বেশী। আর মানুষ লাগবে কমপক্ষে ৩জন, চেয়ার-টুল বা মোড়া জাতীয় উচ্চ কিছু লাগবে। অথচ ১০সেকেন্ডে মধ্যে দোলার মাথার উপরে ওড়নার ঝুলন্ত অংশ ছুরি,বটি ইত্যাদি দিয়ে কাটা সম্ভব ছিলো। আবার দোলাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দু-পায়ে ধরে উপরের দিকে উঠালে গলার ফাঁস না কেটেই খোলানো যেতো, ওড়না কাটারই প্রয়োজন হতো না। তাছাড়া শ্বাশুড়ী-ভাসুর ও স্বামীর সাথে কি এমন ঘটনা ঘটেছিলো, অথবা দোলার জীবনে কি এমন কষ্ঠ ছিলো, যার জন্য দোলা তার ১১ মাসের ফুটফুটে বাচ্চা আব্দুল্লাহকে রেখে আত্মহত্যা করবে।

এমন আরো অনেক প্রশ্নের উত্তরই বলে দিবে দোলাকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে। দোলার লাশ গোসল দানকারী একাধিক নারী জানান, দোলার শরীরের একাধিক স্থানে রক্ত জমাট বাঁধা আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। এব্যাপারে জামান মেম্বার বলেন, শুনেছি মেয়েটা আত্মহত্যা করেছে, লাশ ওদের বাড়ীতে আনার পরে আমাকে খবর দিয়েছে, আমি গিয়েছি, পুলিশ আসছে, সুরতহাল রিপোর্ট করে লাশ মর্গে পাঠিয়েছে, এ পর্যন্তই দেখেছি।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Adsense