স্টাফ রিপোর্টারঃ আমি গত রাত থেকে যতবার পুলিশ অফিসারকে হত্যা করার ভিডিওচিত্রটি দেখেছি ততবারই পুলিশ বাহিনীর শৃঙ্খলা ও ধৈর্য দেখে অবাক বনে গেছি। মানুষের রক্ত, মাংষ আর জীবন নিয়ে ন্যাক্কারজনক বাণিজ্য ফেঁদে বসা কসাইচক্র কী ভয়ঙ্কর জিঘাংসায় পুলিশ কর্মকর্তার প্রাণ কেড়ে নিলো তা ভাবতেই শরীর শিউরে উঠে। ভিডিওটি দেখে পুলিশ বাহিনীর লাখো সদস্য ক্ষুব্ধ হয়েছে, শোকবিহবল হয়েছে। কিন্তু শৃঙ্খলা ভঙ্গের সাভাবিক দৃশ্যপটেরও সূচণা আমরা দেখতে পাইনি। রাস্তার বাসে বাসে যে হকাররা শষা-আমড়া বিক্রি করে জীবন নির্বাহ করে-তাদের একটা ধমক দিয়েও রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই। বাসস্ট্যান্ড কিংবা টার্মিনালে বাস পৌঁছলেই হকাররা সবাই জোট বেধে হামলা চালায়, প্রতিশোধ নেয়। অথচ দেশের সর্ববৃহৎ জোট, বাহিনী, সংঘবদ্ধ দলই হচ্ছে পুলিশ। তারা প্রতিশোধ স্পৃহা নিয়ে একটা করে ঢিল ছুঁড়লেও আদাবরের হাসপাতাল নামক কসাইখানাটি এতক্ষণ গুড়ো গুড়ো হওয়ার কথা…কিন্তু কঠিন ধৈর্য আর শৃঙ্খলার নিদর্শন থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা একচুলও নড়েননি। ২০১৪ সালে পুলিশ সপ্তাহ চলাবস্থায় শ্রদ্ধেয় সম্পাদক নঈম নিজামের নির্দেশে “দুঃখে-কষ্টে গুমরে কাঁদে পুলিশ” বিষয়ক প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহকালে একজন কনস্টেবলের মন্তব্য গ্রহণ করছিলাম উত্তরায়। কথা বলতেই কনস্টেবল ভাইটি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। শার্টের আস্তিনে দুচোখের পানি মুছে যেন ষে করতেই পারছিলেন না তিনি। এরমধ্যেও থেমে থেমে তিনি যা বলে উঠেন তা ধারণ করার যোগ্যতাই ছিল না আমার। আবেগাপ্লুত কনস্টেবল ভাইটির কষ্টকান্না সবই যেন আমাকে উগরে দিতেই বলতে থাকেন তিনি: “হরতালকারীদের ইটের আঘাতে থেতলে যাওয়া রক্তাক্ত সহকর্মীর লাশ ধরে কান্নারত এক কনস্টেবল বলে উঠেন, ‘আমরাও রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ, অথচ আমাদের ওপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল, গুলি, বোমা ছুড়লেও পাল্টা জবাব দিতে পারি না। আমার সহকর্মীকে চোখের সামনে ইট দিয়ে থেতলে নৃশংসভাবে হত্যা করলেও আমার কিছু বলার অনুমতি নেই। আমার হাতে মারণাস্ত্র, তপ্ত বুলেট নলে ঢুকানো তবু উপরের নির্দেশ ছাড়া আমি ট্রিগারে চাপ দিতে পারি না। আমি হাত বাঁধা পুলিশ। মানুষের ভালোবাসা থেকে কিছুটা নিচে আমার স্থান, কেবলই ঠাট্টা আর তাচ্ছিল্যের প্রাণী আমরা…” তার সেসব বাক্যই আজ বারবার শুধু আমার কানে ধ্বণি প্রতিধ্বণিত হচ্ছে। আমার আদরের ভাই, ভোলার সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম লিখেছে-আনিসুল করিম পুলিশ না হয়ে যদি আর্মির কেউ হতো তাহলে আমাদের কথিত মানবাতাবাদিদের দরদ উতলাইয়া পরতো তবে আমি বলবো: আমাদের ভাই আনিসুল করিম পুলিশের না হয়ে অন্য কোনো বাহিনীর হলে পরিস্থিতি হয়তো এতক্ষণে অন্যরকম হতো।
Leave a Reply