মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ভারতের একটি রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, প্রাণ গেল ১২ জনের রাতে ভাত খাওয়া কি সত্যিই ক্ষতিকর? পুষ্টিবিদদের বক্তব্য কী? জুলাই স্মরণে ২০২৪ শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ এআইইউবি ইন্টার কলেজ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপের শুভ সূচনা চীন সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে : মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের ইতিবাচক লেখনির মাধ্যমেই ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার : ডিবিএ সভাপতি এবার হাসপাতালে প্রবাসীর স্ত্রীর মরদেহ রেখে পালাল শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা খালি পেটে কখনো কোন কাজ করা ঠিক নয় ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ: এনবিআর অচল, রপ্তানি কার্যক্রম ঝুঁকির মুখে একদিনে আরও ২৬২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১ জন

স্বাধীনতা যুদ্ধের সূর্য সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৫০তম শাহাদতবার্ষিকী পালিত

খন্দকার ছদরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি 
  • Update Time : রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৫২৮ Time View

নড়াইলে স্বাধীনতা যুদ্ধের সূর্য সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৫০তম শাহাদতবার্ষিকী পালিত হয়েছে। জন্মস্থান নড়াইলের নূর মোহাম্মদ নগরে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হয়।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ট্রাস্ট ও নড়াইল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কর্মসূচির মধ্যে ছিল কোরআনখানি, র‌্যালি, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ।

রবিবার ৫সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের বসতভিটায় স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন নড়াইল জেলা প্রশাসন, নড়াইল জেলা পরিষদ, পুলিশ প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সদর উপজেলা পরিষদ,বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ট্রাস্ট, আওয়ামী লীগ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মহাবিদ্যালয়, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।

শ্রদ্ধাঞ্জলি শেষে মহান এই বীরের প্রতি সম্মান জানিয়ে পুলিশের একটি চৌকস বাহিনী রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার প্রদান করেন।

পরে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার মিলনায়তনে মহান এই বীরের জীবন ও কর্মের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত শেষে প্রায় দেড়শত অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, বিশেষ অতিথি পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ফকরুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানজিলা সিদ্দিকা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ছেলে শেখ মোস্তফা কামাল প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। পরে অসহায় ও দুস্থদের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরন করা হয়।

১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ যশোরের শার্শা উপজেলার গোয়ালহাটি গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।

তিনি ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে ওই গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে ‘নূর মোহাম্মদ নগর’।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের বাবার নাম মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মায়ের জেন্নাতুন্নেছা। বাল্যকালেই তিনি বাবা-মাকে হারান। লেখাপড়া করেছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত।

১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে ইপিআর, বর্তমানে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ-বিজিবি যোগদান করেন। দিনাজপুর সীমান্তে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই বদলি হন যশোর সেক্টরে। পরবর্তীতে তিনি ল্যান্স নায়েক পদোন্নতি পান।

১৯৭১সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন নড়াইলের এ সাহসী সন্তান নূর মোহাম্মদ।

এ সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর এস এ মঞ্জুর। এদের নেতৃত্বেও প্রাণ-পণ লড়েছেন নূর মোহাম্মদ।

৫ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনীর গুলিতে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলেও সহযোদ্ধাকে কাঁধে নিয়েই এলএমজি হাতে শত্রুপক্ষের সাথে যুদ্ধ করেছেন। গুলি ছুড়েছেন। হঠাৎ করে পাকবাহিনীর মর্টারের আঘাতে নূর মোহাম্মদের হাঁটু ভেঙে যায়। তবুও গুলি চালান। শক্রমুক্ত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান।

১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন রণাঙ্গনের লড়াকু সৈনিক নূর মোহাম্মদ।

যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। বর্তমানে তার ছেলে গোলাম মোস্তফা কামাল ও তিন মেয়ে আছেন। গত বছর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা ইন্তেকাল করেন।

এ বীরের সম্মানার্থে নূর মোহাম্মদ নগরে সরকারিভাবে ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মাণ করা হয়েছে।

২০০৮ সালের ১৮ মার্চ কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করেন। নূর মোহাম্মদের বাড়িতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ নগরে এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় এই বীরের নামে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।

১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির নিম্ন মাধ্যমিক স্তর ১১ বছর পর ২০১০ সালে এমপিওভুক্ত হলেও মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত হয়নি।

এছাড়া ২০০৫ সালে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের নামে একটি মহাবিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। তবে কলেজটি এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Adsense