যুদ্ধবিরতির পর কমলেও ফের বাড়ছে স্বর্ণের দাম, ডলারের পতনে নতুন গতি
ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর কিছুটা কমে গিয়েছিল স্বর্ণের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ, যার প্রভাবে নেমে আসে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম। তবে সম্প্রতি মার্কিন ডলারের মান কমতে শুরু করায় স্বর্ণের দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ০.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,৩৪৭.৩৯ ডলারে। তবে ফিউচার মার্কেটে দাম একই হারে কমে ৩,৩৬০.৯০ ডলারে পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণ নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের প্রকাশ্য মতবিরোধের ফলে ডলারের মান কমেছে। এই পরিস্থিতিতে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণে আবারও আগ্রহ বাড়ছে।
বুধবার (২৫ জুন) ট্রাম্প ও পাওয়েলের পাল্টাপাল্টি মন্তব্য বাজারে আলোড়ন সৃষ্টি করে। পাওয়েল বলেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি দীর্ঘমেয়াদে মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, ফলে ফেডকে সুদের হার কমানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। জবাবে ট্রাম্প তাকে ‘ভয়ংকর’ আখ্যা দিয়ে বলেন, তার হাতে ফেডের নেতৃত্বের জন্য আরও তিন-চারজন বিকল্প রয়েছেন।
নেমোডটমানির প্রধান বাজার বিশ্লেষক হান ট্যান মন্তব্য করেন, “সুদের হারের বিষয়ে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত স্বর্ণের দাম ৩,০০০ থেকে ৩,৫০০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করবে।”
এদিকে, বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশের পর শুক্রবার (২৭ জুন) আসবে ব্যক্তিগত ব্যয় (PCE) প্রতিবেদন, যা ফেডের কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রাস্ফীতি নির্দেশক। ট্যানের মতে, “যদি PCE প্রত্যাশার চেয়ে কম আসে, তাহলে স্বর্ণের দাম ২১ দিনের চলমান গড় ছাড়িয়ে ৩,৪০০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।”
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং মুদ্রাস্ফীতির সময় স্বর্ণকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচনা করা হলেও উচ্চ সুদের হার স্বর্ণের প্রতি আকর্ষণ কমিয়ে দেয়, কারণ এতে সুদ বা লভ্যাংশ নেই।
অন্যদিকে, অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর দামেও বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে। প্যালাডিয়ামের দাম ৪.৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১০৩.৭০ ডলারে, যা ২০২৪ সালের পর সর্বোচ্চ। প্ল্যাটিনামের দাম বেড়ে ৩.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১,৪০২.৫৭ ডলারে, যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
উইজডমট্রির পণ্য কৌশলবিদ নীতেশ শাহ জানান, “যদিও বিশ্বে ধীরে ধীরে জ্বালানি ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে, অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের ব্যবহার এখনো ব্যাপক। এসব গাড়ি প্ল্যাটিনাম গ্রুপের ধাতুর ওপর নির্ভরশীল। নতুন খনি থেকে সরবরাহ বাড়ছে না, উপরন্তু ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি সরবরাহ ব্যবস্থাকে ব্যাহত করছে।”
এছাড়া স্পট সিলভারের দামও ০.৫ শতাংশ বেড়ে ৩৬.৪৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের দুর্বলতা, ফেডের নেতৃত্ব ঘিরে অনিশ্চয়তা এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্যের প্রতীক্ষায় বিনিয়োগকারীরা ফের ঝুঁকছেন স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর দিকে।
Leave a Reply