শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ০২:০৬ অপরাহ্ন

তুরস্ক সোমালিয়াকে T-129 ATAK হেলিকপ্টার সরবরাহ করছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : বুধবার, ৪ জুন, ২০২৫
  • ১১৯ Time View
তুর্কি প্রতিরক্ষা সংস্থা টিএআই দ্বারা উত্পাদিত ‘টি১২৯ আতাক’ হেলিকপ্টার। ছবি- সংগৃহীত

চলতি সপ্তাহেই আল-শাবাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সোমালিয়ার জন্য প্রতিরক্ষা সহায়তা জোরদার করেছে তুরস্ক

চলতি সপ্তাহে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-শাবাবের হুমকির মোকাবেলায় সোমালিয়াকে দেওয়া সামরিক সহায়তা আরও বাড়িয়েছে তুরস্ক। গত শনিবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ও সোমালির প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহাম্মদের ফোনালাপের পর আঙ্কারা সামরিক সহায়তা বৃদ্ধি করে।

দ্য মিডল ইস্ট আই সূত্রে জানা গেছে, তুরস্ক এ সপ্তাহে সোমালি সরকারকে তিনটি ‘টি-১২৯ আতাক’ হেলিকপ্টার সরবরাহ করেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায় দেশটি এর আগে সোমালির নৌবাহিনীকে দুটি ইউটিলিটি হেলিকপ্টারও সরবরাহ করেছে। একই সঙ্গে, সোমালির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ নৌবাহিনী গঠনের দায়িত্বও নিয়েছে আঙ্কারা।

গত এক বছরে তুরস্ক সোমালি পাইলটদের আতাক হেলিকপ্টার চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সেই প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর এবার সরাসরি হেলিকপ্টারগুলো পাঠানো হলো। ওপেন-সোর্স তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ছয়টি তুর্কি এ-৪০০এম ও কাতারি সি-১৭এ কার্গো বিমান মোগাদিশুতে পৌঁছেছে, সম্ভবত হেলিকপ্টার বহন করেই।

মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

একটি সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, আতাক হেলিকপ্টার সরবরাহের মাধ্যমে তুরস্ক কেবল অস্ত্র সরবরাহেই থেমে থাকবে না; বরং সোমালিকে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধক্ষমতা সৃষ্টিতে সহায়তা করবে।

শনিবারের ফোনালাপে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার সোমালি সমকক্ষকে আশ্বস্ত করেছেন, তুরস্ক সোমালির উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় আরও জোরালো সহযোগিতা করবে। ২০২৬ সালের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশটিকে স্থিতিশীল করাই আঙ্কারার অন্যতম লক্ষ্য।

আল-শাবাবের নতুন হুমকি ও তুরস্কের জবাব

গত কয়েক মাসে রাজধানী মোগাদিশুর দক্ষিণাঞ্চলে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে আল-শাবাব। যদিও এর আগেও গোষ্ঠীটি বিভিন্ন এলাকায় অগ্রগতি দেখিয়েছিল, পরে সোমালি বাহিনীর সামরিক চাপে পিছু হটতে বাধ্য হয়। এই প্রেক্ষাপটে তুরস্ক তার সামরিক উপস্থিতি দ্বিগুণ করে ৫০০-এর বেশি সৈন্য মোতায়েন করেছে। এ বাহিনী তুর্কি ঘাঁটি, সমুদ্রবন্দর সুরক্ষা ও সশস্ত্র ড্রোনের দায়িত্ব পালন করছে।

তুরস্কের টিবি২ বায়রাক্টার ড্রোন আগে থেকেই সক্রিয় থাকলেও সম্প্রতি দেশটি সোমালিতে দুটি আকিনসি ড্রোন পাঠিয়েছে। এই ড্রোনগুলো দীর্ঘ সময় উচ্চতায় উড়ে থাকতে ও রাতেও অভিযান চালাতে সক্ষম, যা আল-শাবাবের বিরুদ্ধে লড়াইকে আরও কার্যকর করে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া, তুরস্কের অগ্রগতি

যুক্তরাষ্ট্র যখন ধীরে ধীরে সোমালিতে সহায়তা কমাচ্ছে, তখন তুরস্ক সামরিক সহযোগিতা বাড়িয়ে দেশটিতে একটি শক্তির শূন্যতা পূরণের কৌশল নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা সম্প্রতি বাড়লেও মার্চ মাসে দেশটির অভিজাত দানাব ইউনিটের তহবিল কমিয়ে দিয়েছে, যে ইউনিটটি আল-শাবাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

বাণিজ্য ও জ্বালানি অংশীদারত্ব

২০১১ সালে এরদোয়ানের প্রথম সোমালি সফরের পর থেকে আঙ্কারা মোগাদিশুতে ক্রমশ সক্রিয় হয়েছে। বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা অংশীদারত্বের সম্পর্কও আরও গভীর হয়েছে। গত বছর তুরস্ক সোমালির সঙ্গে উপকূলীয় এলাকায় জ্বালানি অনুসন্ধান ও খনন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এরই মধ্যে অনুসন্ধান জাহাজও পাঠিয়েছে।

যদিও এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তবে সম্প্রতি এরদোয়ান বলেছেন, “জ্বালানি বিষয়ে সুখবর আসছে”— যা সোমালির জ্বালানি সম্ভাবনার ইঙ্গিত হতে পারে। আঙ্কারায় জল্পনা শুরু হয়েছে যে, ঘোষণা হয়তো সোমালির জ্বালানি খাত সম্পর্কেই হতে পারে।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Adsense