গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর মনে করেন, বর্তমান সরকারের ন্যূনতম দুই বছরের মেয়াদ থাকা প্রয়োজন। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর এফডিসিতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে তিনি এ কথা বলেন।
নুর বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ২ বছরের জন্য একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রয়োজন, যারা রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার এনে দেশকে একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবে।
তিনি উল্লেখ করেন, ছয় মাস বা এক বছরের মধ্যে নির্বাচন হলে বিদ্যমান ব্যবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। এই সরকার একটি অরাজনৈতিক ও বিপ্লবী সরকার। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজনীতি অপরিহার্য। গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তীতে বর্তমান পরিস্থিতিতে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়। তাই, অন্তর্বতী সরকারে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করতে হবে। অন্যথায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলে ছয় মাস টিকে থাকা মুশকিল হবে।
নুর আরও বলেন, সরকারের এনজিও মার্কা চেহারার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ফ্যাসিবাদী সরকারের সহযোগিতাকারী রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইন করে দশ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে, যাতে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।
এছাড়া, পতিত সরকারের আমলে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে যে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল, তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন ডাকসুর সাবেক ভিপি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বিগত আওয়ামী সরকারের ছাত্র সংগঠন গত ১৫ বছরে শিক্ষাঙ্গণে ছাত্র রাজনীতির নামে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল, তা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির কথা শুনলেই আমাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করে। ছাত্রলীগের অতীত কর্মকাণ্ড আমাদের উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আওয়ামী শাসনের সময়ে ছাত্রলীগ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে নির্যাতন চালিয়েছে, তার জন্য তাদের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, প্রক্টর এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
এ সময় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ১০ দফা সুপারিশ করেন হাসান আহমেদ। সেগুলো হলো:
১. উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
২. শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।
৩. লেজুড়ভিত্তিক ছাত্রসংগঠন বা দলীয় পরিচয়ের পরিবর্তে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্টুডেন্ট ক্যাবিনেট নির্বাচন করা।
৪. রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি ডাকসু নির্বাচনসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্টুডেন্ট ক্যাবিনেট নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা।
৫. বিগত শাসনামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, যৌন হয়রানি, নিয়োগ, টেন্ডার বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের দ্রুত বিচার করার লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অনিয়মে যুক্ত প্রশাসনের প্রশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজন অনুযায়ী বর্তমান প্রশাসনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৬. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাদা, লাল, নীল, বেগুনি ইত্যাদি নামকরণের মাধ্যমে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা।
৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিং, টর্চার সেল, হল দখল, সিট দখল, আদিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, এবং সন্ত্রাস দমনে কর্তৃপক্ষকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৮. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সব মতাদর্শের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহাবস্থান নিশ্চিত করা।
৯. শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনার পরিবর্তে যোগ্য মেধাবীদের শিক্ষকতায় আসার সুযোগ তৈরি করা।
১০. আসন্ন বাজেটে উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য গবেষণা, বৃত্তি ও কো-কারিকুলার কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করা।
অনুষ্ঠানে ‘ছাত্র রাজনীতি: শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের অন্তরায়’ শীর্ষক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
Leave a Reply