শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪০ অপরাহ্ন

লক্ষ্মীপুরে মা-মেয়েকে জুতাপেটা করলেন ইউপি সদস্য জনসম্মূখ্যে!

সোহেল হোসেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১
  • ২৯০ Time View

লক্ষ্মীপুরে রায়পুর উপজেলা ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে মা-মেয়েকে জুতাপেটা করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. আরিফুর রহমান রোববার (২৯ আগস্ট) বিকেলে এক সালিশী বৈঠকে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে ভূক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে ইউপি সদস্যের ভয়ে আইনের আশ্রয় নেয়নি ভূক্তভোগী পরিবার। পুলিশ বলছে- লিখিত অভিযোগ দিলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং পুরো পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

ভূক্তভোগী নারী কেরোয়া ইউনিয়নের উত্তর-পূর্ব কেরোয়া গ্রামের কালা শাহ ফকির বাড়ির সৌদি প্রবাসী আব্বাছ উদ্দিনের স্ত্রী। তার মেয়ে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণীতে পড়ে। ভূক্তভোগী নারী সোমবার (৩০ আগস্ট) রাতে অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বাড়িতে একটি সালিশী বৈঠকে প্রায় দুই শতাধিক লোকের উপস্থিতিতে ইউপি সদস্য আরিফ আমার ১৭ বছরের মেয়েকে জুতা দিয়ে আঘাত করে।

এতে আমি প্রতিবাদ করায় সে আমাকেও জুতা দিয়ে পেটায়। বিষয়টি তাৎক্ষণিক আমি প্রবাসে থাকা আমার স্বামীকে মোবাইল ফোনে অবহিত করলে মেম্বার আরিফ উত্তেজিত হয়ে আমার ফোনটি কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে। তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর রাতে পুলিশ এসে আমাদেরকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করায়।

এর পর থানায় নিয়ে গেলে ঘটনার বিস্তারিত খুলে বলি। পুলিশ আমাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছে। সোমবার সকালে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এরই মধ্যে মেম্বার আরিফ আমাদের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে আমাকে চাপ দেয়- আমি যেন থানায় কোন অভিযোগ না দিই।

মেম্বারও এসে আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে গেছে। আমার স্বামী বিদেশে থাকে, আমি একা বাড়িতে ছোট দুই ছেলে এবং মেয়েকে নিয়ে থাকি। তাই মামলা করলে মেম্বার যদি কোন ঝামেলা করে সেই ভয়ে আর থানায় যায়নি। এ বিষয়ে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সততা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার পর খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে ওই নারী ও তার মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।

ভূক্তভোগী নারীকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। সোমবার অভিযোগ দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তিনি থানায় আসেননি। ভূক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে পুরো পরিবারকে সর্বাত্মক নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

থানা থেকে তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। মেম্বার হোক বা চেয়ারম্যান হোক- কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে কেরোয়ার কালা শাহ ফকির বাড়িতে ১৩ বছরের একটি মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

কিন্তু মেয়েটি বিয়েতে রাজী ছিলো না। তার অন্য আরেকটি ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিলো। অনুষ্ঠানের আগেরদিন দুপুরে মেয়েটি তার প্রেমিকের কাছে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার সহযোগী হিসেবে ওই মেয়ের পরিবার প্রবাসী আব্বাছ উদ্দিনের মেয়েকে দায়ি করে ইউপি সদস্য আরিফের কাছে নালিশ করে।

রবিবার বিকেলে মেম্বার আরিফ তাদের বাড়িতে এসে সালিশী বৈঠকের ডাক দেন। বৈঠকের এক পর্যায়ে মেম্বার আরিফ তার পায়ের সু-জুতা দিয়ে প্রবাসী আব্বাছ উদ্দিনের মেয়েকে আঘাত করেন। সাথে সাথে মেয়েটির মা ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাকেও বেশ কয়েকবার জুতাপেটা করেন আরিফ।

পরে উপস্থিত লোকজন আরিফকে থামান। এ বিষয়ে জানতে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে ইউপি সদস্য আরিফুর রহমানের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেনেনি। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে কল দিলে তিনি রিসিভ করে ১০ মিনিট পরে কল দেওয়া কথা জানান। আধাঘণ্টা পর পুনরায় কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category