মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৯ অপরাহ্ন

এক টুকরা মাংসের আশায় মিসকিনদের ঘুরাঘুরি; এটাই কি ত্যাগের মহীমা!

আহসান হাবীব, স্টাফ রিপোর্টার
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই, ২০২১
  • ২৪৮ Time View

ত্যাগের মহীমায় আমরা কতটুকু ভাস্বর?

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আঃ) কে আল্লাহর নির্দেশে ধারালো ছুরির নীচে দিয়ে যে ত্যাগের মহীমা শিক্ষা দিয়ে গেলেন এই মুসলিম জাতিকে। সেটার সাথে ছবিটা মিলালেই বোঝা যায় আমরা কি কি ত্যাগ করে ভাস্বর হয়ে গেছি! ১০/১২ তলা বিল্ডিং/ফ্লাটের নীচে দু’শ গ্রাম মাংসের আশায় সারা দিনমান ছোটাছুটি করা শত শত দরিদ্র মানুষের ক্লান্ত ছবি দেখে আপনারও মনে হবে বছরে একদিনে দশজন ধণী ব্যক্তির কলাপ্সিবল গেটে দাঁড়িয়ে কিংবা রাস্তায় লাইন পেতে বসে ২ কেজি মাংশ পেলেই কোরবানি দাতা আর হাত পেতে মাংশ চাওয়া দরিদ্র, দিনমজুর, কর্মহীন শ্রমিক, কিংবা হতভাগিনী বিধবার আসমান জমিন ফারাক বৈষম্য কখনোই দুর হবে না।

ঈদ, কারো জীবনে বয়ে আনে হাসি আনন্দ,আবার কারো জীবনে বয়ে আনে শুধুই চোখের জল।
কোরবাণী ইসলামের একটা অন্যতম ইবাদত হলেও এর সৌন্দর্য ও সামাজিক বন্ধনকেও সুদৃঢ় করে। এদেশের অসংখ্য মানুষ বছরেও একবার ৬০০/৮০০ টাকা কেজির মাংস কেনার সামর্থ রাখে না। তাদের কাছে দশ দুয়ারের এক পুটলি গোস্তই বিশাল প্রাপ্তি। কোরবানীদাতার দুয়ারে বাঁধা লাখ টাকার গরুর আহ্লাদ দেখে ছেড়া পাঞ্জাবী আর মলিন শাড়ি পরা পড়শী কিংবা বস্তিবাসী গোস্ত পাবার আশায় ঈদের আগের রাতেই তেল মশলা জোগাড় করে রাখে। প্রাডো মার্সিডিজ হোন্দাই গাড়ীর পেছন ডালায় আরেক স্বচ্ছল বন্ধুর জন্য কার্টুন ভরা মাংস নিয়ে ছুটে যাওয়ার সময় কিংবা ডীপ ফ্রিজ ভরে রানের গোস্ত জমানোর সময় আপনার আমার বাসার কাজের মানুষ কিংবা অস্বচ্ছল প্রতিবেশীর হ্রদয়ে কতটা কষ্টের মেঘ জমে, সেটা বুঝতে না পারলে ত্যাগের মহীমায় ভাস্বর কেবল কর্পোরেট মেসেজেই সীমাবদ্ধ রয়ে যাবে।

কোরবানীর পশু কেনায় লাভ-লোকসানের হিসাব!
গর-খাসির দাম কত পড়ল-এটা জানা এবং জানানোর আগ্রহ আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত রেওয়াজ। এই কেনাবেচার হাটে কোরবানী দাতা এবং পশু বিক্রেতার লাভ লোকসানের হিসাব কসা দেখলেই বুঝা যায়, আমরা ত্যাগের মহীমায় কতটা ভাস্বর হয়েছি। একজন ধনী ব্যক্তি লাখ টাকার ষাঁড় ৯০ হাজার টাকায় কিনতে পারলেই নিজেকে বিশাল জয়ী মনে করেন। কিন্তু পাঁজরের হাড় ভেঙে, কপালের ঘাম ফেলে সারা বছর একটা গরু পুষে একজন দরিদ্র খামারী যদি হাজার দশেক টাকা লাভ করেন, তাতে কি কোরবানি দাতার খুব লস হয়ে যায়? অনেকেই আবার কোরবানি শেষ করেই সলিড মাংস, চর্বি, কলিজা, হাড্ডির হিসাব ক্যালকুলেটর দিয়ে আলাদা করে যোগ করে কেজি প্রতি কত দাম পড়ল, সেটাও হিসাব মিলিয়ে নেন। কেউ আবার কোরবানীর গরুর মাংসের সম্ভাব্য ওজন নিয়ে বাজী ধরতেও মুন্সিয়ানা দেখান! এসব বিশাল আত্মা কোরবানি দাতার ত্যাগ কোন স্তরে পৌঁছে যায়, সেটা কেবল অন্তর্যামী ই জানেন।

মিসকিনের একভাগ!
ইসলামের বিধান মতে কোরবানীর গোস্তে অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য এক তৃতীয়াংশ মিসকিনের হক আছে। এই ভাগাভাগির জন্য দাঁড়িপাল্লা বাটখারার দিয়ে জটিল সিস্টেমে গোস্ত মাপামাপিও সমাজে এক বিশাল হেরিডিটি তৈরি করে ফেলেছে। আজকাল ডিজিটাল বাটখারার কারনে গোস্তের হিসাবে একটু দ্রুততা ফিরে এলেও মনের প্রশস্ততা আমাদের অনেকের ই বাড়েনি। আজ একজন কোরবানী দাতাকে দেখলাম বাটখারার সাথে লেগে থাকা একটুকুরো ‘সীনা’র গোস্ত’ নিজের ভাগে অতি সাবধানে সরিয়ে নিতে! এমন ত্যাগের ঔজ্জ্বল্য দিয়ে অন্তত নবী ইব্রাহিম (আঃ) এর কোরবানীর মহীমাকে স্পর্শ করা সম্ভব নয়।

চামড়া মানেই কি এতিমখানায় দান?
সেই ছোট বেলা থেকেই যেমন দেখে এসেছি, ৪৪ বছর পর গতকাল দুপুরেও দেখলাম নিকটস্থ এতিমখাগুলো কোরবানীর চামড়ার সোল হকদার হয়ে আছে। সারা বছর এসব চামড়া বিক্রির অর্থ দিয়ে এতিম নিবাসীদের থাকা খাওয়ার কিছুটা খরচ চলে, ঠিক ই, কিন্তু চামড়া কালেকশনের এই ট্রাডিশন এতিমখানার সামাজিক মর্যাদা যে আদৌ বাড়েনি সেটাতো নিশ্চিত বোঝা যায়। ইদানীং চামড়া সিন্ডিকেটের কারনে ব্যাবসায়ীদের আর্থিক লোকসান ও অসহনীয় হয়ে পড়েছে।

ত্যাগের প্রকৃত মহীমা! ঈদের দিন মাগরিব নামাজের পর মাথায় মাংস বয়ে নিয়ে যাওয়া একজন কসাইকে জিজ্ঞেস করছিলাম, কতটুকু মাংস পেলেন? উত্তরে বললেন, সাহেব পুরো গরুটার এক টুকরো মাংস ও নিজে নেননি। ভাবলাম, ঐ ভদ্রলোক দ্বিতীয় কোন পশু কোরবানী করলেও একটা আস্ত গরুর পুরো দু’শ কেজি মাংস দরিদ্রদের জন্য বিলিয়ে দিয়ে অবশ্যই ত্যাগের একটা ছোট খাটো মহীমা অন্তত দেখাতে পেরেছেন। আল্লাহ উনার কোরবানী টা কবুল করুন।

আলোকিত জনপদ .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category