তানুকে আমি দেখিনি। তার সঙ্গে কথাও হয়নি। অপরিচিত যুবক। বাড়ি ঝিনাইদহ থেকে অনেক অনেক দুরে। ঠাকুরগাঁও জেলায়। পত্রিকা ও অনলাইনের খবরে শিরোনাম হয়েছেন তিনি। আজ দুই দিন ধরে ফেসবুক উত্তাল তানুকে নিয়ে। কারণ হচ্ছে তানুসহ আরো দুই উদিয়মান সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা। তাদের অপরাধ গত ৫ জুলাই ‘দিনে বরাদ্দ ৩০০ হলেও করোনা রোগীদের খাবার দেয়া হচ্ছে ৭০ টাকার! এই শিরোনামে তাদের নিজ নিজ পত্রিকা ও অনলাইনে সংবাদ ছেপেছেন। ব্যাস! রা রা করে উঠলেন ঠাকুরগাঁও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. নাদিরুল আজিজ। খবরের সত্যতা পেয়েও বলির পাঠা বানালেন সাংবাদিকদের। ঠিকাদারকে শাস্তি দিলেন না। কারণ তত্ত্বাবধায়ক ঠিকাদারের উচ্ছিষ্টভোগী। মামলা করলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(১)(ক) ২৫(১)(খ) ২৯(১)/৩১(১)/৩৫(১) ধারায়। মামলা রেকর্ড হতে যা দেরি। পুলিশ ভাইয়েরা পড়ি কি মরি সাংবাদিক তানুকে ধরলেন। মনে হচ্ছিল তানু দেশের সবচে বড় দাগী আসামী। হাতকড়া আর দড়ি দিয়ে বাধলেন। রোববার (১১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংবাদিক তানুকে ঠাকুরগাঁও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) ডালিম কুমার রায় সাংবাদিক তানুর পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় ঠাকুরগাঁও সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমানের আদালত তানুর জামিন মঞ্জুর করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার অপব্যবহারের মৃত্যু হলো। জয় হলো বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার। আর দুর্নীতি করেও অধরা থাকলেন ‘দিনে বরাদ্দ ৩০০ হলেও করোনা রোগীদের খাবার দেয়া হচ্ছে ৭০ টাকার! কারিগররা। হয়তো জেলার প্রতিটি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হালচাল এমন। তানু সাহস করে লিখেছে। আমরা লিখতে পারি না। প্রধানমন্ত্রী যদি মাত্র একটি এই সংবাদের সুত্র ধরে তদন্তের নির্দেশ দেন, তবে হাসপাতালের সব রোগীরা তিনবেলা মাছ গোস্ত খেয়ে আরাম আয়েশে ফুর্তি করে নিরোগ দেহে সুস্থ সবল সুঠাম শরীর নিয়ে হয়তো বাড়ি ফিরতেন। তানু তুমি ভাই একা নও। সৎ ও বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বিাসী দেশে হাজারো তানু দুই দিনে জেন্মছে। তোমার সাহসী লেখা আর হাসপাতালে, আদালতের বারান্দায় মুষ্টিবদ্ধ শৃংখলিত হাত প্রকৃত সাংবাদিকদের শক্তি যোগাবে লেখার।
Leave a Reply