রাজনীতির পরিচর্যাঃ
পৃথিবীর জন্ম লগ্ন থেকে রাজনীতি চলে আসছে অদ্যাবধি, রাজনীতির সুফল তারাই উপলব্ধি করতে পেরেছেন যারা রাজনীতির পরিচর্যা সঠিকভাবে সঠিক সময়ে করতে পেরেছিলেন। রাজনীতিবিদেরা সফল ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিশ্ব দরবারে নিজেকে স্বর্ণশিখরে নিতে সক্ষম হয়েছেন তাঁদের জীবনী পর্যালোচনা করলে কিছু অতি প্রয়োজনীয় বিষয় লক্ষণীয়। রাজনীতিতে সবাই সফল হতে পারেনা, এখানে সফলতা বলতে রাজনীতিবিদের / নেতার মনোবাসনা বা লক্ষ্য পূরণের বিষয়টাকে বলতে চেয়েছি। ফুটবল মাঠে ১১জন খেলোয়াড় থাকে কিন্তু দলপতি একজন, দলপতি তার সুচারু বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তার সহ যোদ্ধা বা খেলোয়াড়দের কে সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের জালে গোল করানোর মাঝে পূর্ণতা ও সফলতা পায়। পুরো ৯০ মিনিটে এগারো জন খেলোয়াড় সমানভাবে পারফর্ম করতে পারে না, তাই দলপতি অনেক সময় বদলি খেলোয়াড় দিয়েও খেলা পরিচালনা করেন বিজয়ের জন্য, দলের সুনাম রক্ষা ও দর্শকদের আনন্দ দিতে। জয়ের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় দলের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় দলের প্রতি সমর্থন।
প্রতিপক্ষ ৯০ মিনিটের পারফরম্যান্সে পুরো মাঠে ভাল খেলেও পরাজিত হলে, এমন ভালো খেলা মূল্যহীন। দলের পরাজয়ের দায় কিন্তু দলপতির। এই ব্যর্থতার কারণ গুলো যদি ভবিষ্যতে সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয় দলপতির দলীয় সফলতা পুনরায় নিজ দলেই আসতে পারে।
রাজনৈতিক মাঠের দলপতি তাঁর সহকর্মী, সহ যোদ্ধার সঠিক মূল্যায়ন সঠিক ব্যবহার এর মাধ্যমে পারেন রাজনীতিক সফলতা অর্জন করতে, তা না হলে ব্যত্যয় অনিবার্য।
রাজনীতিবিদদের/ নেতার লক্ষ্য পূরণ বিষয়টা কিন্তু এমন নয়- রাজনীতিবিদের/নেতার ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি, মিলিয়ন বিলিয়ন টাকা জমা হওয়া, প্রকৃত রাজনীতিবিদদের/ নেতার সফলতা হলো তাঁর কর্মীদের বুঝতে পারা, জনগণের মুখে হাসি, দেশের কল্যাণ ও উন্নয়ন।
রাজনীতিবিদ/ নেতা তাঁর সঠিক Values সঠিকভাবে সমন্বয় ও মূল্যায়ন যতক্ষন না করতে পারবেন, ততক্ষণ তিনি তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না বা পারবেন না। রাজনীতিবিদের Values নির্ধারণ করাটাই সবচাইতে কঠিন।
রাজনীতিবিদের Values কি? মূলতঃ এ Values রাজনীতিবিদদের/নেতার মূল হাতিয়ার।
কমিটমেন্ট, পারফরম্যান্স, কর্মীবান্ধব(কর্মীর প্রতি যত্নশীল ও মূল্যায়ন করা), জনগণের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা।
কমিটমেন্টঃ
কমিটমেন্ট ছাড়া রাজনীতিবিদ/নেতা হওয়া যায়না সুতরাং কমিটমেন্টই রাজনীতিবিদদের ধরন ও ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে থাকে। রাজনীতিবীদের কমিটমেন্টে ব্যত্যয় হলে রাজনীতিতে বেশিদূর আগানো যায় না, হয়তো কিছু সস্তা জনপ্রিয়তা ও অর্থ সম্পদের মালিক হওয়া যায়। জনপ্রতিনিধি হওয়া যায়না।
পারফরম্যান্সঃ
কমিটমেন্ট কে সঠিকভাবে প্রয়োগের উপর নির্ভর করে রাজনীতিক পারফরম্যান্স। এখানে একটি জিনিস সবসময় মাথায় রাখা জরুরী কর্মী ও জনগণ এক নয়। কারণ কর্মী আগামীদিনের রাজনীতিবিদ। কর্মীর মাধ্যমে রাজনীতিবিদকে /নেতাকে জনগণের কাছে সেবা ও কমিটমেন্ট নিয়ে পৌঁছানো টাই হচ্ছে পারফরম্যান্স।
কর্মীবান্ধবঃ
একজন প্রকৃত রাজনীতিবিদ তথা সফল নেতা হতে হলে কর্মীর মুখ দেখেই রাজনীতিবিদকে বুঝতে হবে কর্মী র চাহিদা/প্রত্যাশা। কর্মীর যুক্তিক চাহিদার মূল্যায়ন রাজনীতিবিদের/নেতার অবশ্যই করতে হবে। নেতা একজন কিন্তু কর্মী অজস্র সুতরাং অজস্র কর্মীর মনবাসনা পূরণ নেতাকেই করতে হয়। রাজনীতিবিদের ব্যত্যয় তখনই ঘটে যখন কোন রাজনীতিবিদ/নেতা শুধু বিশেষ শ্রেণীর কর্মীর উপর নির্ভর করে। বিশেষ শ্রেণীর কর্মীর উপর নির্ভরশীলতা নেতার একটা দুর্বলতা, নেতার রাজনীতির সফলতার জন্য এই বিশেষ শ্রেণীর কর্মী হতে পারে ব্যর্থতার মূল কারণ। আরো একটা বিষয় হলো নেতাকে কখনোই কর্মীদেরকে আমজনতার ক্যাটাগরিতে ফেলা যাবে না। কর্মীবান্ধব রাজনীতিবিদই জননেতা হতে পারেন।
দেশ ও জনগণের কল্যাণঃ
কমিটমেন্ট পারফরম্যান্স ও কর্মী মূল্যায়ন এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয় ব্যতীত দেশের উন্নয়ন ও জনগণের মুখে হাসি আশা করা অমাবস্যার চাঁদের মত। রাজনীতিবিদকে/নেতাকে সদা সর্বদা মনে রাখতে হবে যে তিনি একজন সেবক মাত্র, একজন সেবক হিসাবে কর্মীর মাধ্যমে জনগণের কাছে সেবা পৌছে দেওয়ার মধ্যেই রাজনীতিবিদের তথা নেতা সফলতা নির্ভর করে।
অরিন্দম হালদার
সদস্য, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটি,
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
Leave a Reply