২০১৯ সালে গোটা বিশ্ব নতুন এক ভাইরাসের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে, যার নাম কোভিড-১৯। এই কোভিড-১৯ এর থাবা থেকে রক্ষা পায়নি ভারতও। ২০২০ সালের শুরুর দিকে এই দেশেও ছড়িয়ে পরে করোনা ভাইরাস। কোভিডের সংক্রমণ রুখতে বন্ধ করে দেওয়া হয় সমস্ত পরিষেবা। স্কুল থেকে অফিসের সমস্ত কাজ লকডাউনে করতে হয় বাড়ি বসে।
লকডাউনে এই সমস্ত কাজ করতে মানুষ অনলাইন পথের সঙ্গে বেশি পরিচিত হয়ে ওঠে। বলা যেতে পারে এই অনলাইন মাধ্যমে নির্ভর হয়ে যাওয়ার ফলে তথ্য প্রযুক্তির একটা বিশাল বিল্পব ঘটে। কিন্তু এই অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস এবং নানা বিষয়ে নির্ভয় হয়ে যাওয়ার ফলে বাচ্চাদের মানষিক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানাচ্ছে ডাক্তাররা। করোনার জন্য লকডাউনে অসুস্থ বাচ্চাদের সংখ্যা হাসপাতাল জুড়ে বেড়ে চলেছে। প্রতি সপ্তাহে একভাবে গ্রাজেট ব্যবহারের ফলে কমপক্ষে দু’টি ক্ষেত্রে বাচ্চাদের মানষিক ক্ষতির রিপোর্ট উঠে আসছে বলে হিসেব দেয় চিকিৎসকেরা।
একভাবে ফোন বা ল্যাপটপের মতো মাধ্যমে বেশি সময় কাটানোর ফলে মুম্বাইয়ের ২২ মাসের এক বাচ্চার মধ্যে স্পিচ রিগ্রেশন দেখা যায়। বেশ কিছু আচরণগত সমস্যার কারণে বাচ্চাটিকে শহরের ডক্টর এল এইচ হিরানন্দানি হাসপাতালে ভর্তি কারনো হয়েছে।
হিরানন্দানি হাসপাতালের ডাক্তার বিজয় শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, ২২ মাসের ওই শিশুটি স্পিচ রিগ্রেশনের কারণে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছে না। এমনকি আগে যেখানে বাচ্চাটি ১৫ থেকে ২০ শব্দ ব্যবহার করতো সেখানে বর্তমান সে ১ থেকে ২ টি শব্দ ব্যাবহার করছে। আচরণগত পরিবর্তনের কারণে বাচ্চাটি কথা না বলে বিভিন্ন ইঙ্গিতের মাধ্যমে তা বোঝানোর চেষ্টা করেছে বলেও জানানো হয়। মোবাইল ফোন, টিভি এবং আইপ্যাডের মতো একাধীক গ্যাজেটে বাচ্চাটির কাটানো সময় দিনে চার ঘন্টা ছিল বলে তার মধ্যে ভার্চুয়াল অটিজম সনাক্ত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ডাক্তার শ্রীবাস্তব ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ফোন, ল্যাপটপ এমনকি টিভি না দেখার পরামর্শ দিয়েছে অভিভাকদের।
লকডাউন সময়ে অধীক গ্যাজেট ব্যবহারে এই আচরণগত পরিবর্তণ হয়েছে, যার জন্য চিকিৎসক বাচ্চাটির হেয়ারিং এবং স্পিচ থেরাপি শুরু করার কথা জানিয়েছে। অভিভাবক নিজের শহরে গিয়ে এই চিকিৎসা করানোর অনুমতি নিয়েছে ডাক্তারের কাছে, যাতে বাচ্চাটি সেই সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে পারে।
অন্যদিকে আবার অধীক সময়ের স্ক্রিন দেখার ফলে একটি বাচ্চার মধ্যে বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। চিকিৎসক জানিয়েছে, স্ক্রিনের বর্ধিত সময়ের কারণে ১২ বছরের একটি বাচ্চাকে অত্যন্ত চঞ্চল ও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এই বিষয়ে পেডিয়াট্রিক নিউরোলজিস্ট ডাক্তার ওমকার হাজির্নিস জানিয়েছেন, ১২ বছরের এই শিশুটি মোট ৮ থেকে ১০ ঘন্টা গ্যাজেটের ওপর নির্ভরশীল ছিল। আর এই কারণে বাচ্চাটির মাথা ব্যাথা, কম ঘুম এবং চঞ্চল এর মতো বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা দিতে থাকে। এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলি দূর করবার জন্য চিকিৎসক বাচ্চাটির অভিভাবককে সংগীত এবং নানা শারীরিক ক্রিয়াকলাপ যেমন স্কিপিং, জগিং, য়োগা শুরু করানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
Leave a Reply