
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তৎকালীন মেজর এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর অবদান দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, “সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আজকের এই সংবর্ধনায় আপনাদের স্বাগত জানাই। এই বিশেষ দিনে আমি স্মরণ করছি সেইসব শহীদ, যুদ্ধাহত এবং সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে—যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা শিগগিরই জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছি। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই আমরা নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করতে চাই—এটাই আমাদের স্বপ্ন। নির্বাচন যেন সর্বতোভাবেই সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর হয়, সে জন্য আমরা সবাই মিলেই কাজ করব।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় আসন্ন নির্বাচন এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠবে। নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিত করতে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী সবসময়ই দেশ গঠন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় জনগণের পাশে থেকেছে। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, চলমান দেশ পুনর্গঠন ও সংস্কার উদ্যোগেও বাহিনী আগের মতোই মানুষের আস্থা অর্জন করে কাজ করছে।
ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করে বলেন, গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রতি অনুগত সশস্ত্র বাহিনী পেশাদারিত্ব, দেশপ্রেম ও ত্যাগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।
তিনি আরও বলেন, “শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে আমরা সব বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করি। তবে যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।” এ লক্ষ্যেই সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের কাজ চলমান রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, পূর্ববর্তী ফ্যাসিস্ট আমলে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বাহিনীগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। একই সঙ্গে দেশরক্ষা ও জনকল্যাণমূলক কাজে বিপুলসংখ্যক ছাত্র-যুবসমাজকে যুক্ত করতে বিএনসি-র কার্যক্রম বিস্তারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনে। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিল বলে এই দিনটি মুক্তিযুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমরা বিজয়ী না হলে এই বীর সেনাদের মৃত্যুদণ্ড অনিবার্য ছিল এবং তাদের পরিবারও অসহনীয় পরিণতির মুখে পড়ত। মুক্তিকামী সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অকুতভয় যোদ্ধারা নিজেদের জীবন এবং পরিবারের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন—তাঁরাই জনসাধারণকে সাহস জুগিয়েছিলেন এবং জল, স্থল ও আকাশপথে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলে দেশকে মুক্ত করেছিলেন।”
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, যুদ্ধ সুসংগঠিত করতে ‘বাংলাদেশ ফোর্সেস’ গঠন করা হয়, যার অধীনে মুক্তিযোদ্ধারা ১১টি সেক্টরে সামরিক ও গেরিলা প্রশিক্ষণ লাভ করেন। এরই পরিণতি ছিল ২১ নভেম্বরের সম্মিলিত অভিযান, যার ধারাবাহিকতায় ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি জানান, গত ৩৭ বছরে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ৪৩টি দেশে ৬৩টি মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ১০টি মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে পরিচিত। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা অর্জন করেছে—এ জন্য তিনি সশস্ত্র বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।