
মাহমুদউল্লাহ ২০২১ সালের জুলাই মাসে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন, যা একটি তুমুল আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা দেননি, কিন্তু হারারে টেস্টের মাঝপথে সতীর্থদের গার্ড অব অনার দেয়ার পর সবাই বুঝে যায় যে তিনি অবসর নিচ্ছেন। এরপর অনেক দিন তিনি এ নিয়ে কিছু বলেননি, যা অবসর নিয়ে একটি রহস্যের সৃষ্টি করেছিল।
এখন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি কোনো নাটকীয়তা তৈরি করেননি। আজ দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ জানান, ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ শেষেই তিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেবেন। তবে তিনি জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে খেলতে চান।
ভারতের বিপক্ষে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে খেলে মাহমুদউল্লাহর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি হবে ১২ অক্টোবর হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে।
মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ডধারী। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তিনি ৪৩টি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে টস করেছেন।
৩৯ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহ সিরিজ শুরুর আগেই এই সিদ্ধান্তটি নিয়ে নিয়েছিলেন এবং প্রথম ম্যাচের পর তিনি বিসিবিকে এ কথা জানান। বিসিবিও তাঁর বিদায় নিতে চাওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় মাহমুদউল্লাহর। তিনি বাংলাদেশ হয়ে সর্বমোট ১৩৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন, যেখানে ১১৭.৭৪ স্ট্রাইক রেটে ২৩৯৫ রান করেছেন এবং গড় ২৩.৪৮। পরবর্তী দুই ম্যাচ খেলে তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার ১৪১ ম্যাচে শেষ হবে। এর চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড আছে মাত্র দুজনের।

বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ডটি মাহমুদউল্লাহর দখলে। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তিনি ৪৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে টস করেছেন। ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন তিনি। বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি জয়ও রয়েছে তার। তবে এই রেকর্ডে তিনি একমাত্র নন; সাকিব আল হাসানও সমান ১৬টি জয় নিয়ে তার সাথে ভাগীদার।
ক্যারিয়ারের শেষ পাঁচ-ছয় বছরে মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে ফিনিশারের ভূমিকা পালন করেছেন। এই ভূমিকায় তিনি সবচেয়ে বেশি সার্থকতা দেখিয়েছেন ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত নিদাহাস ট্রফিতে। ফাইনালে ওঠার জন্য যে ম্যাচটি জিততেই হবে, সেই স্নায়ুক্ষয়ী খেলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহর ১৮ বলে অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে স্মরণীয় জয় এনে দেয়। শেষ চার বলে ১২ রান প্রয়োজন ছিল—এই পরিস্থিতিতে মাহমুদউল্লাহ প্রথম তিন বলেই খেলা শেষ করে দেন। প্রথম দুই বলে ৪ ও ২ রান, পরের বলে ছক্কা! মাহমুদউল্লাহর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় ইনিংস এটি হতে পারে।

হয়তো গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ১৬ রানের ইনিংসের কথা মনে পড়বে। তবে রানসংখ্যাটি সেই ইনিংসের গুরুত্ব বোঝাতে যথেষ্ট নয়। ১৮তম ওভারে পরপর ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের ৮ উইকেট পড়ে যায়। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ১১ রান। ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে মাহমুদউল্লাহ ম্যাচ শেষ করে দেন। এই জয় বাংলাদেশের সুপার এইটে ওঠার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহর কথা বললে এই দুটি ইনিংসের কথা মনে পড়ে। আশা করা যায়, ভারতের বিপক্ষে সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে তিনি আরো কিছু চমকপ্রদ ইনিংস উপহার দেবেন। শেষ ম্যাচে নিশ্চয়ই স্মরণীয় কিছু করার লক্ষ্য নিয়েই ব্যাটিং করতে নামবেন মাহমুদউল্লাহ।